Tuesday, January 19, 2010
ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার ও জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে 'বাংলা'র অন্তর্ভূক্তি দাবী
বর্তমান বিশ্বের সাড়ে ৬০০ কোটি মানুষ প্রায় ৬ হাজার ভাষায় কথা বলে। তবে ভাষাতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, আগামী একশ বছরের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ভাষা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ অতীতেও অনেক ভাষা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। একসময় পাশ্চাত্যের একটি বিখ্যাত ভাষা ছিল ‘ল্যাটিন’ । কিন্তু এ ভাষায় এখন আর কেউ কথা বলে না। ভারতীয় উপমহাদেশের এমন একটি ভাষার নাম ‘সংস্কৃত’ । ধর্মীয় কাজের বাইরে এর কোন ব্যবহার নেই। মধ্যযুগে ব্রিটেনের একটি ভাষা ছিল ‘কর্নিশ’। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত একজন মহিলা জীবিত ছিলেন যিনি ঐ ভাষায় কথা বলতেন। তার মৃত্যুর পর ঐ ভাষাটিও বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
‘The languages of the world’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৬ হাজারের মতো ভাষা আছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ অর্থাৎ শ'তিনেক ভাষায় পৃথিবীর ৯৬ ভাগ মানুষ কথা বলে। বাকী সাড়ে পাঁচ হাজার ভাষার মধ্যে যেসব ভাষায় কথা বলার লোক এক লাখের বেশী নেই, সেগুলোর মধ্যে বেশকিছু ভাষা এখন বিলুপ্তির পথে। এক হিসেবে দেখা গেছে, আজকের পৃথিবীতে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, পৃথিবীতে এমন ৫১টি ভাষা আছে যেগুলোর প্রতিটিতে মাত্র একজন করে ব্যবহারকারী রয়েছে! এ চিত্র থেকে একটা বিষয় পরিস্কার যে, বিশ্বের জীবন্ত ভাষাগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এই বিলুপ্তির হার বন্যপ্রাণী কিংবা গাছপালা বিলুপ্তির হারের চেয়েও বেশী। কিন্তু বাংলাভাষার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত দেখা যায়।
বিশ্বে বাংলা ভাষার অবস্থান
বর্তমান বিশ্বে প্রায় ২৬ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলা ভাষার স্থান ষষ্ঠ। শুধু বাংলাদেশের মানুষই যে এ ভাষায় কথা বলে তা নয় বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মণিপুর, বিহার ও উড়িষ্যা এবং মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলের রোহিঙ্গারাও বাংলা ভাষায় কথা বলে। আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিয়নে বাংলাকে ২য় সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সেদেশের জনগণ বাংলাভাষা শিক্ষা করছে।
বাংলা ভাষার আন্দোলন
বিশ্বে বাংলাই সম্ভবতা একমাত্র ভাষা-যার মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে আব্দুস, সালাম,রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সারা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ও তীব্র আকার ধারণ করে। অবশেষে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে উর্দুর সম-মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া ’৫২-এর চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে ১৯৬১ সালের মে মাসে বাংলা ভাষার ব্যবহার বন্ধ করার প্রতিবাদে ভারতের আসামের শিলচর শহরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন ১১ জন। ১৯৬১ সালে আসাম প্রাদেশিক সরকার শুধু অহমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারী ভাষা ঘোষণা দিলে বাঙালীদের ভেতর ক্ষোভ দানা বাঁধে । ক্রমশঃ তা আন্দোলনে রূপ নেয় । ১৯ মে শিলচরে সকাল ৬টা-সন্ধ্যা ৬টা ধর্মঘট পালন করে। বেলা সাড়ে তিনটায় ভাষাবিপ্লবীরা যখন স্থানীয় রেলওয়ে ষ্টেশনে রেলপথ অবরোধ পালন করছিল তখন আসাম রাইফেলসের একটি ব্যাটালিয়ান তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আসাম রাইফেলস গুলবর্ষণ করলে ঘটনাস্থনে প্রাণ হারান ১১জন ভাষাবিপ্লবী। রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়। এরপর আসামে বাংলাকে ২য় রাজ্যভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলা ভাষার প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করতে গিয়ে বাঙালীরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা ইউনেস্কোর নজরে আনার জন্য কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড’ প্রচেষ্টা শুরু করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়। ওই দিন ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব ২১শে ফেব্রুয়ারীকে ‘আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতি জানানোর প্রস্তাব উত্থাপন করে এবং অপর ২৫টি দেশের সদস্যরা সেটিকে অনুমোদন করে। এরপর থেকে সারা বিশ্বে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।'
ইউনেস্কোর পর জাতিসংঘও একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৮ সালের গত ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র দফতর ‘শান্তির জন্য সংস্কৃতি’ শীর্ষক একটি রেজুলেশন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে তুলে ধরে। ভারত, জাপান, সৌদি আরব, কাতারসহ বিশ্বের ১২৪টি দেশ এই রেজুলেশনটি সমর্থন করে। এই রেজুলেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এবং শান্তির জন্য সংস্কৃতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংস্কৃতির সংলাপকে উৎসাহিত করতে মাতৃভাষাগুলোর অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা করার দাবি
২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘ ভাষা শহীদদের প্রতি নিঃসন্দেহে ব্যাপক সম্মান দেখিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এতেই কি সন্তুষ্ট ? মোটেই না। আর এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৪তম অধিবেশনে বাংলাভাষাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সদস্য দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছেন ।
ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাংলাদেশের ভাষা শহীদরা জীবন দিয়েছিলেন। সেদিনের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতি বছর এই দিন ইউনেস্কো বিশ্বের সকল ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দিবসটি পালন করে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের পার্লামেন্ট জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছে বাংলাকে এর অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য। ভাষার শক্তির প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে বাংলাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে আমি সকল সম্মানিত সদস্যের সমর্থন কামনা করছি।’
বাংলাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবির সাথে একমত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত ২১শে ডিসেম্বর ২০০৯ জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিসংবলিত একটি সর্বদলীয় প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার হাসিম আবদুল হালিম।
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে এখন ছয়টি ভাষা স্বীকৃত। এসব ভাষা হলো- ইংরেজি, চাইনিজ, আরবি, ফরাসি, রাশিয়ান ও স্প্যানিস। এর মধ্যে রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে বিশ্বের প্রায় ১৭ কোটি মানুষ এবং বিশ্বের প্রায় ২২ কোটি মানুষ আরবিতে কথা বলে । কিন্তু বাংলায় কথা বলে প্রায় ২৬ কোটি মানুষ। ফলে রুশ ও আরবি যদি জাতিসংঘের অফিশিয়াল ভাষা হওয়ার যোগ্যতা রাখে তাহলে বাংলা কেন পারবে না? সরকার যদি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে তাহলে একদিন না একদিন বাংলাভাষা অবশ্যই জাতিসংঘের অফিশিয়াল ভাষার স্বীকৃতি পাবে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলা ভাষা
বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা, রেডিও, টেলিভিশন, ও ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে বাংলা ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ,ভারত ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানী, চীন, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ফিলিপাইন,জাপান প্রভৃতি দেশ থেকে প্রতিদিনই বাংলা ভাষায় রেডিও অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়ে থাকে। এছাড়া ব্রিটেন, কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে টিভি অনুষ্ঠানও প্রচার করা হচ্ছে। এসব রেডিও, টিভির অনুষ্ঠান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলাভাষীরা উপকৃত হচ্ছেন।
ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া বর্তমান যুগে কোন দেশই অগ্রসর হতে পারবে না। আর একারণেই ভাষাপ্রেমী প্রযুক্তিবিদরা তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন। বাঙালী প্রযুক্তিবিদদের প্রচেষ্টায় বর্তমানে ফায়ারফক্স ব্রাউজার,ওপেন অফিস, জুমলা,গুগল, লিনাক্স, উবুন্টু এসব বাংলা ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে। ওয়েব ব্রাউজার মজিলা সম্প্রতি আটটি ভাষাতে বেটা সংস্করণ অবমুক্ত করেছে। এই আটটি ভাষার মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাও আছে। এর ফলে এখন থেকে আমরা বাংলা ভাষার ইন্টারফেসের ফায়ারফক্স ব্যবহার করতে পারবো। ফায়ারফক্সে এখন বাংলা অভিধানও যুক্ত আছে। সেটি সক্রিয় করে বাংলা লিখলে লেখার সময় বানানে ভুল হলে সতর্ক করা হয়। গুগলের দারুণ দারুণ সব সার্ভিস সম্পর্কে আমরা কে না জানি! গুগল সার্চ ইঞ্জিনে বাংলা অনেক আগে থেকে যুক্ত হলেও সার্চের সময় বাংলা অটো-কমপ্লীট যুক্ত হয়েছে কিছুদিন আগে। গুগলের আর একটি ভাল সার্ভিস হচ্ছে google transliteration, যে সব সাইটে বাংলা লেখার ব্যবস্থা নেই, সে সব ওয়েব ব্রাউজারে খুব সহজেই বাংলা লেখা সম্ভব। গুগল ট্রান্সলেটরে বাংলা ভাষা না থাকলেও গুগল অভিধানে সম্প্রতি বাংলা ভাষা যুক্ত হয়েছে। বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় সোসাল সাইট ফেসবুকেরও বাংলা রূপান্তর করা হয়েছে। ব্লগার ডট কম আংশিক বাংলা ভার্সন তৈরি হয়েছে প্রায় বছর খানেক আগেই। সম্প্রতি এ কার্যক্রম তাদের জনপ্রিয় মেইল সার্ভিসেও প্রয়োগ করেছে। বলতে গেলে পুরো বাংলাতেই এখন কম্পিউটারের অনেক কিছু ব্যবহার করা সম্ভব।
উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়ায় বাংলা
ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় তথ্যভাণ্ডার হচ্ছে বাংলা উইকিপিডিয়া। ইন্টারনেটে মুক্ত বাংলা বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার নিবন্ধের সংখ্যা ২০ হাজার অতিক্রম করেছে। প্রসঙ্গত ২০০৪ সালে বাংলা উইকিপিডিয়ার কাজ শুরু হলেও শুরুতে এর অগ্রগতি ছিল ধীরগতির। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের বাংলা উইকি দল গঠনের পর থেকে দ্রুত এটি বিস্তৃত হতে থাকে। এখানে বাংলা ভাষার ইতিহাস,বাংলা বর্ণের উৎপত্তির বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়া ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের দিনপঞ্জিও রয়েছে।
এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত একটি বিশ্বকোষ হলো বাংলাপিডিয়া। ২০০৩ সালে ১০ খন্ডে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই এটি ছাপা হয়। এছাড়া এর ইলেকট্রনিক সংস্করণও প্রকাশিত হয়। এখানে প্রায় ১২০০ লেখকের লেখা স্থান পেয়েছে। ওয়েবসাইটেও এসব তথ্য বিদ্যমান। বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন, একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে বাংলায় প্রচুর তথ্য রয়েছে।
প্রয়োজন সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার
অমর একুশকে জাতিসংঘের স্বীকৃতি, সিয়েরা লিয়নে বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদাদান এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার বহুল ব্যবহারের পরও বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চার ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষজন আঞ্চলিক বাংলায় কথা বললেও শহরাঞ্চল বিশেষকরে রাজধানী কোলকাতার অধিকাংশ বাঙালী ইংরেজি ও হিন্দির চর্চা করে। ফলে বাংলা ভাষা সেখানে আত্মাহুতি দেয়ার মুখে। এ দিকটি লক্ষ্যে করেই ভারতের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কয়েক বছর আগে বলেছিলেন, “আগামী পঞ্চাশ বছর পরে বাংলা ভাষার চর্চা হবে কেবলমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক।”
সুনীল বাবুর বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা যথার্থ কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। কারণ খোদ বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে ভাষার ব্যবহার এখনও চালু হয়নি । উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা এখনও উপেক্ষিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা ভাষার চর্চা নেই। অনার্স, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি কোর্স কোথাও বাংলা সাহিত্যের জায়গা নেই। অথচ মহান ভাষা আন্দোলনের মূল দাবি ছিলো- ‘অফিস আদালতে সর্বত্র বাংলাভাষা ব্যবহার করতে হবে । আমাদের সংবিধানের প্রথমেই শেখা আছে,‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। কিন্তু তারপরও সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু এবং ‘শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাভাষা’ চালু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোন উদ্যোগ এখনো নেই। নিজ দেশের সর্বত্র যদি আমরা বাংলা ভাষার ব্যবহার না করতে পারি তাহলে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভূক্তির চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment