Saturday, June 20, 2015

আমি ভার্জিন ছিলাম না: রেইহানা জাব্বারি

খুনের দায়ে ইরানে গত ২৫ অক্টোবর ফাঁসি হওয়া নারী রেইহানা জাব্বারিকে নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম মেতে উঠেছিল। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেরও বেশ কিছু টেলিভিশন এবং পত্রপত্রিকা রেইহানার ফাঁসির বিরুদ্ধে খবর প্রচার ও প্রকাশ করেছে। এসব গণমাধ্যমের খবর প্রকাশের ঢং দেখে পরিষ্কার মনে হয়েছে- সত্য প্রকাশ নয়; তারা যেন ইরান সরকারকেই দায়ী করে খবর ছাপতে প্রস্তুত। তাদের বক্তব্য থেকে মনে হতেই পারে ‘ইরানে যেন নারীর অধিকার বলতে কিছু নেই, যেন ইরান সরকার রেইহানাকে ফাঁসি দিয়ে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। মনে হতে পারে ইরানে নারী হলে বুঝি ফাঁসি দেয়াটা কোনো ব্যাপার নয়। আরো মনে হতে পারে রেইহানা নারী বলেই ফাঁসি হলো; পুরুষ হলে ফাঁসি হতো না।’ কিন্তু আসলে কি তাই? কেন এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খবর তুলে ধরা? কেন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে অপপ্রচার এবং আসল সত্য গোপনের চেষ্টা করা হচ্ছে? অথচ অপপ্রচার না চালালে এবং নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে সত্যকে সামনে রেখে এগিয়ে গেলে হয়ত রেইহানা বেঁচে যেত পারতেন। তাহলে কেন এমন অপপ্রচার হয়েছে রেইহানাকে নিয়ে? এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়ার আগে একটু দেখা যাক বিচার চলার সময় আদালতে রেইহানা কি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এছাড়া, মামলার বিচারক একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি কি বলেছেন তাও একটু জানা দরকার। রেইহানার কুমারিত্ব ও বিচারকের সাক্ষাৎকার: খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ২০০৭ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর দীর্ঘ সাত বছর ধরে বিচার চলেছে ইরানের আদালতে। এ সময় রেইহানা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, তিনি নিজে ভার্জিন ছিলেন বা কুমারি ছিলেন না। রেইহানা আরো জানিয়েছেন, তিনি নিজে একটি অফিসে চাকরি করতেন এবং সেই অফিসের ম্যানেজারের সঙ্গেও তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের জের ধরে তিনি বেশ কয়েকবার ইরানের উত্তরাঞ্চলের চলুস মহাসড়কে অবস্থিত ম্যানেজারের ভিলায় গেছেন। ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্কের এক পর্যায়ে রেইহানা গর্ভবর্তীও হয়ে পড়েছিলেন। তার এ স্বীকারোক্তি আদালতের নথিতে সংযুক্ত রয়েছে। রেইহানার এই স্বীকারোক্তির কথা জানিয়েছেন ফাঁসির রায় দেয়া বিচারক হাসান থারদাস্ত। তিনি জানান, ম্যানেজারের সঙ্গে রেইহানার এসএমএস এবং কথাবার্তার প্রিন্ট ও তথ্য-প্রমাণাদি তার মামলার ফাইলে সংযুক্ত রয়েছে। নিহতের সঙ্গে রেইহানার কি সম্পর্ক: ফারারু ডট কমের পক্ষ থেকে বিচারক থারদাস্তের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- নিহত মোর্তেজা সারবান্দির সঙ্গে রেইহানার কোনো কাজের সম্পর্ক ছিল কিনা। এর জবাবে বিচারক জানিয়েছেন, রেইহানা আদালতে কমপক্ষে তিনবার বলেছিল- “আমি সারবান্দিকে ‘সার্ভিস’ দিতাম যাতে সেও আমাকে সেবা দেয়।” কোনো ধরনের কাজের সম্পর্ক ছিল না। লাগামহীন চলাফেরা করা ছেলেমেয়েরা সাধারণত ‘সার্ভিস’ দেয়াকে বিশেষ পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার করে যার অর্থ হলো নিজেদের মাঝে অবৈধ যৌন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা (অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে যৌন সুবিধা দেয়া)। আদালতে দেয়া রেইহানার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার অফিসের ম্যানেজারের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে রেইহানার বাগদত্তার সঙ্গেও তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তদন্তে সেই বাগদত্তার একটি এসএমএস উদ্ধার করা হয়েছে যাতে তিনি রেইহানাকে বলেছেন, “তুমি আমাকে বিদায় বলেছ যখন তুমি তার শয্যাসঙ্গীনি হয়েছ…..নোংরা….এটা তোমাকে আমার সর্বশেষ এসএমএস।” কেন বয়সের এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সারবান্দির সঙ্গে সম্পর্ক?: রেইহানা জানিয়েছেন এবং মামলার নথিতে রয়েছে তাতে দেখা যায়- রেইহানা বলেছেন, “আমি তাকে কিছু নিয়ন্ত্রিত সার্ভিস (যৌন সেবা) দিতে চেয়েছিলাম বিনিময়ে কিছু আর্থিক সুবিধা পেতে চেয়েছিলাম। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে, পরিবারের সহায়তা ছাড়াই আমি স্বাবলম্বী হতে পারি।” হত্যার ঘটনা ও আলামত: হত্যাকাণ্ডের দু দিন আগে রেইহানা বাজার থেকে ছুরি কিনেছিলেন। তদন্তে এবং রেইহানার স্বীকারোক্তি থেকে তা বের হয়েছে। এছাড়া, হত্যার ঘটনা সম্পর্কে রেইহানা নিজেই যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তা হচ্ছে- ঘর সাজানোর কোনো কাজ ছিল না বরং তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণেই সেখানে যাওয়া। আদালতে রেইহানার আইনজীবী বলেছিলেন, সারবান্দির ঘাড়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলেন রেইহানা। কিন্তু ময়নাতদন্তে দেখা গেছে- ছুরি ঢুকেছে সারবান্দির ফুসফুসে এবং ছুরি ছিল ১০ ইঞ্চি লম্বা। দরজায় ছুরির একাধিক দাগ থাকারও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় নি। বরং দরজাতে একটি ভারী কিছু ছুঁড়ে মারার চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে তদন্তে জানা যায়- সারবান্দি সেদিন নামাজ শেষ করে রেইহানার সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু রেইহানার ছিল খুনের পরিকল্পনা। সারবান্দি নামাজ পড়তে শুরু করলে রেইহানা ছুরি দিয়ে মাত্র একটি আঘাত করেন। ছুরি মারার পর রেইহানা দ্রুত পালিয়ে যান। তখন সারাবান্দি চেয়ার ছুঁড়ে মারেন এবং তা গিয়ে লাগে দরজায়। রেইহানা নিজেও জানিয়েছেন, সে সময় দরজা বন্ধ ছিল না। তিনি ছুরি মেরে দ্রুত লিফটে করে নীচেই নামেন এবং লুকিয়ে থাকেন। আর সারবান্দি সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকেন। তবে মাত্র দুই তলা নামার পর সিঁড়িতেই মারা যান। পরে পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স এলে রেইহানা ওই এলাকা থেকে একটি ট্যাক্সি নিয়ে বাড়িতে চলে যান। ওই রাতে তাকে পুলিশ আটক করে। পাঁচ তলা ভবনের লোকজনকে তদন্তের সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের কেউ কেউ বলেছেন যে, কোনো চীৎকার শোনেন নি বরং একটি শব্দ শুনেছেন। ধর্ষণের চেষ্টা হলে অনেক বেশি চেচামেচি হতো এবং প্রতিবেশিদের জানতে বাকি থাকত না। রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন নি কোনো বিচারপতি: এন্তেখাব নামে একটি পত্রিকা বিচারক হাসান থারদাস্তের সাক্ষাৎকার নেয়। গত ২৩ এপ্রিল থারদাস্তের এ সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। পরে খবরঅনলাইন ডট কম ও ফারারু ডট কম নামে ইরানের দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। অবশ্য তিনি তখন দায়িত্ব থেকে অবসরে গেছেন। সাক্ষাৎকারে বিচারক থারদাস্ত যথেষ্ট আস্থার সঙ্গেই জানান, ইরানের ইসলামি আইন মোতাবেক রেইহানার মামলায় যে রায় দেয়া হয়েছে তা নিয়ে আইনগত কোনো সংশয়ের কারণে নেই। রায়ের বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনার আগে তিনি জানান, তার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রেইহানার ফাঁসির রায় ঘোষণা করে। ২৪ পৃষ্ঠার এ রায় পরে সর্বোচ্চ আদালতের ১৩ জন বিচারপতি পুঙ্খানপুঙ্খ যাচাই বাছাই করেছেন। এরপর তারা সবাই রায়কে সঠিক বলে অনুমোদন করেন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- একজন বিচারকও ওই রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন নি। রায় প্রসঙ্গে থারদাস্ত আরো যা বলেন: রায় প্রসঙ্গে বিচারক থারদাস্ত বলেন, “এমন ভাবার অবকাশ নেই যে, সবাই ভুল করেছেন। তিনি এও বলেন, একজন সাধারণ মানুষ অনেক সময় আবেগতাড়িত হতে পারেন কিন্তু একজন বিচারক এ ধরনের আবেগতাড়িত হয়ে বা কোনোকিছু দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রায় দিতে পারেন না বা দেয়া উচিতও নয়।” তিনি আরো বলেন, রেইহানা আদালতে প্রমাণ করতে পারেন নি যে, তিনি খুন করেন নি। বরং খুনের ঘটনা নির্জলাভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর ভিক্টিম পরিবার মাফ না করায় রেইহানাকে ফাঁসি থেকে বাঁচানো যায় নি। রায় হয়েছে ইসলামি আইন অনুসারে যাতে বলা হয়েছে- হত্যার বদলে হত্যা। এটা আপত দৃষ্টিতে কঠিন আইন মনে হলেও এর একটা কোমল দিক রয়েছে সেটা হচ্ছে ভিক্টিম পরিবার ইচ্ছে করলে মাফ করে দিতে পারে; তখন আদালত ইচ্ছে করলেও ফাঁসি দিতে পারে না। এছাড়া, রেইহানার ফাঁসির রায় নিয়ে যেহেতু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা বাদ-প্রতিবাদ হচ্ছিল সে কারণে তাকে বাঁচানো যায় কিনা সেই চেষ্টায় তার ফাঁসির তারিখ অন্তত দুইবার পেছানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভিক্টিম পরিবার মাফ না করায় তা ঠেকানো যায় নি। সত্য স্বীকার করলে কি মাফ পেতেন রেইহানা?: সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় বিচারক থারদাস্তকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন- সত্য স্বীকার করলে কি রেইহানা নিহত সারবান্দির পরিবারের পক্ষ থেকে মাফ পেতেন? এর জবাবে বিচারক থারদাস্ত জানান, রাজনীতিমনস্ক উকিলদের শিখিয়ে দেয়া কথার পরিবর্তে যদি রেইহানা সততা দেখাতেন এবং যদি বলতেন-আমি মারাত্মক মানসিক চাপে পড়ে ভুল করে ফেলেছি এবং আমি এ জন্য অনুতপ্ত; আমি ক্ষমাপ্রার্থী তাহলে রেইহানা ভিক্টিম পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমা পেতে পারতেন। বিচারক থারদাস্ত জানান, এমনি করে সত্য স্বীকার করে বহু মামলার আসামী বহু পরিবার থেকে ক্ষমা পেয়েছেন। আলাপ প্রসঙ্গে রেইহানার মানসিক দৃঢ়তা নিয়েও কথা বলেন বিচারক থারদাস্ত। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, রেইহানা এতটাই শক্ত মনের অধিকারী ছিলেন যে, নিজ বাবাকেও হত্যার কথা ভাবাটা তার জন্য অস্বাভাবিক ছিল না। তার প্রমাণ হলো- আরো এক যুবকের সঙ্গে রেইহানার অবৈধ সম্পর্ক ছিল যার নাম মামলার নথিভুক্ত রয়েছে- তার সঙ্গে এসএমএস এ বাবা সম্পর্কে খুবই নোংরা ও অবমাননাকর কথাবার্তা বলেছেন। ওই যুবককে এক এসএমএস-এ রেইহানা বলেছিলেন, আমার বাবা সবসময় মাতলামি করে এবং আমাকে মারে। বাবাকেও হত্যা করার কথা বলেছে এসএমএস-এ। মাকে লেখা চিঠিতে রেইহানা বলেছেন, “মা তুমি তো জান যে, আমি কখনো একটা তেলাপোকাও মারি নি বরং তেলাপোকার শুঁড় ধরে জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছি।” বিচারক বলেন, রেইহানার চিঠি থেকে বরং এক ধরনের পুরুষালি ভাব ফুটে উঠেছে। তেলাপোকা মারার চেয়ে তার শুঁড় ধরে ফেলে দেয়াটা শক্ত কাজই বটে! এছাড়া, তাকে মনোবিজ্ঞানী দিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর ওই মিনোবিজ্ঞানী রিপোর্ট দিয়েছেন যে, রেইহানার মধ্যে কোনো উন্মাদনা ছিল না বরং খুবই ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। খুন করার পর বেশ স্বাভাবিকভাবে ওই স্থান থেকে চলে গেছে। এছাড়া, খুনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রথম দফায় কিছু বলেন নি। আর কথা বলার সময় খুব সহজ ও রিল্যাক্স মুডে কথা বলতেন। রেইহানাকে বাঁচাতে বিচারকের প্রচেষ্টা: অনলাইন পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিচারক থারদাস্ত নিজেই বলেছেন, রেইহানার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর তিনি নিজেও ভিক্টিম পরিবারকে বুঝিয়ে রেইহানাকে মাফ করে দেয়ার জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করেছেন। থারদাস্ত নিহতের ছেলেকে বলেছিলেন যে, যেহেতু তোমার বাবা এই মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে পাপ করেছেন সে কারণে এই গরিব মেয়েকে মাফ করে দাও। কিন্তু তারা বলেছে, ‘প্রথমত এই নারী আদৌ কৃতজ্ঞ নন; দ্বিতীয়ত তিনি সত্যের পরিবর্তে বলেছেন আমার বাবা ধর্ষক।’ বিচারক থারদাস্ত জানান, রেইহানার ফাঁসি এবং বিচারের রায় নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম ও তাদের প্রভাবিত মিডিয়া প্রচারণা চালিয়েছে এবং তাতে নিহত সারবান্দিকে ধর্ষক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চলেছে। এতে ওই পরিবারের মান-সম্মানের প্রশ্ন এসেছে এবং এক পর্যায়ে তারা সত্য প্রকাশের বিষয়ে শক্ত অবস্থানে চলে যায়। ফলে তারা অর্থ নিয়ে আর রেইহানাকে মাফ করতে চান নি। বিচারক থারদাস্ত বলেন, গণমাধ্যমের প্রচারণা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি তিক্ত করার জন্য ভিক্টিম পরিবারের সহানভূতি পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় বিচারক থারদাস্ত জানিয়েছিলেন, তিনি নিজে অবসর নিলেও ভিক্টিম পরিবারকে বুঝিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা চালাতে প্রস্তুত রয়েছেন। তাহলে কেন এই প্রচারণা: রেইহানার ফাঁসির ঘটনা নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে কেন এই প্রচারণা- এ প্রশ্নের জবাব সহজেই মিলে যাবে কিছু ঘটনার দিকে নজর দিলে। প্রথমেই দেখা যাক কারা এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে? তারা আর কেউ নয়; নিতান্তই ইরান-বিরোধী একটি গোষ্ঠী। রেইহানার ফাঁসির বিরুদ্ধে জার্মানিতে ইরান দূতাবাসের সামনে একদল নারী পরণের বস্ত্র খুলে নোংরাভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। রেইহানার পাশে দাঁড়িয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, বিবিসি, সিএনএন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ইহুদি লবি ও পশ্চিমা প্রভাবিত গণমাধ্যম। আর এদের এই রায়কে কেন্দ্র করে এত প্রচারণা চালানোর মূল কারণ হলো ইরান-বিরোধিতা। ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য ও সারাবিশ্বে আমেরিকা এবং তার মিত্রদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিকসহ নানা ধরনের সুবিধা বিনষ্ট হয়েছে। নানাভাবে এবং বার বার চেষ্টা ষড়যন্ত্র করার পরও ইরানকে কব্জা করা যায় নি; ইরানের ইসলামি বিপ্লব নস্যাৎ করা য়ায় নি। শুধু তাই নয়, ইরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে নেয়া এবং ইসরাইলের দূতাবাস পুড়িয়ে ছাই করে দেয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে যা দুনিয়ায় অনেকটা নজিরবিহীন। আমেরিকা ও তার মিত্ররা এসব অপমান আজও ভুলতে পারে নি। অন্যদিকে ইরানের নানা ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য এবং এগিয়ে যাওয়া তাদের চক্ষুশূল হয়েছে। এসব কারণে চুন থেকে পান খসলেই তারা ইরানকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তবে মজার বিষয়, পুরুষের মৃত্যুদণ্ডের প্রশ্নে এতটা শোরগোল শোনা যাবে না যতটা শোনা যাবে নারীর ক্ষেত্রে। অথচ নারী অপেক্ষা পুরুষের মৃত্যুদণ্ডের মাত্রা শতকরা ৯৮ ভাগ বেশি। লেখক: সিরাজুল ইসলাম, রেডিও তেহরান, বাংলা বিভাগ

No comments: