Wednesday, July 30, 2008
হিজবুল্লাহর বিজয়ের নেপথ্যে-২
Thursday, July 24, 2008
হিযবুল্লাহর বিজয়ের নেপথ্যে-১
গত ১৬ জুলাই ছিল লেবাননের জনগণ ও সেদেশের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের ইতিহাসে আরেকটি ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় দিন। লেবাননের হিযবুল্লাহ জার্মান সরকারের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে পরোক্ষভাবে দীর্ঘ আলোচনার পর তাঁদের ৫ জন বন্দী এবং অন্তত ২০০ শহীদের লাশ দেশে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে। পক্ষান্তরে হিযবুল্লাহ ইসরাইলী ২ সেনার লাশ অধিকৃত ফিলিস্তিনে ফেরত পাঠিয়েছে। ইসরাইল ভেবেছিলো তাদের ঐ সেনা জীবিত আছে।এর মধ্য দিয়ে বিগত ৮ বছরে ইসরাইলের মোকাবেলায় হিযবুল্লাহর তৃতীয় বিজয় অর্জিত হলো। এরফলে ইসলামী গণআন্দোলন হিযবুল্লাহ ইসরাইলের সামনে তাদের শক্তিমত্তাই প্রমাণ করলো। হিযবুল্লাহ তাদের এই অভিযানকে ক'মাস আগে সিরিয়ায় ইসরাইলী গোয়েন্দাদের হাতে শহীদ ইমাদ মুগনিয়ার নামে নামকরণ করেছে। মুগনিয়া হাজ্জ্ব রেজোয়ান নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। সেজন্যে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে রেজোয়ান অভিযান। যাই হোক হিযবুল্লাহর এই মহান অর্জনকে নিয়ে আমরা আরো কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো। ইসরাইলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেবাননের সাথে বন্দী বিনিময়ের দিনটিকে তাদের দেশের জন্যে শোক দিবস বলে মন্তব্য করেছেন।ইসরাইলী দৈনিক ইয়াদিউত অহরুনুত এ সম্পর্কে লিখেছে, 'ইসরাইলীরা বেদনার অশ্রু ঝরাচ্ছে আর লেবাননীরা ঝরাচ্ছে গর্ব ও আনন্দের অশ্রু।' ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীরা বছরের পর বছর ধরে সংগ্রাম চালাবার পর ২০০০ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো ইসরাইলী সেনাদেরকে দক্ষিণ লেবানন থেকে তাড়াতে সক্ষম হয়। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ইসরাইলী সেনারা হিযবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় লেবাননের ওপর হামলা চালায়। কিন্তু ৩৩ দিন যুদ্ধ করার পর লেবাননের জনগণ এবং হিযবুল্লাহর পর্বত কঠিন প্রতিরোধের মুখে ইসরাইল মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয় এবং তাদের নৃশংস হামলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে লেবাননের হিযবুল্লাহর তৃতীয় বিজয় অর্জিত হয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিযবুল্লাহর শহীদদের লাশ এবং বন্দীদের ফেরত আনার মাধ্যমে। বিগত কয়েক মাস ইসরাইলের সাথে আলোচনাকালে তারা লেবাননী বন্দী ও শহীদদের লাশ ফেরত দিতে অস্বীকার করে আসছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিযবুল্লাহর চাপের মুখে তারা কেবল লেবাননী শহীদদের লাশ এবং বন্দীদেরকেই ফেরত দিতে বাধ্য হয় নি বরং বন্দী বিনিময়ের পূর্ব মহূর্ত পর্যন্ত তারা জানতেও পারে নি যে তাদের ঐ দুই সৈন্য যুদ্ধে নিহত হয়েছে। হিযবুল্লাহর বিজয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি সামনে আসে তাহলো অন্যান্য আরব দেশ সুসজ্জিত সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও এবং উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত এ ধরণের বিজয় অর্জন করতে পারলো না! ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিযবুল্লাহর বিজয়ের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো,হিযবুল্লাহর মুমিন সংগ্রামীদের আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতা এবং তাদের মুজাহিদদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য। এ কারণেই হিযবুল্লাহর পতাকায় কোরআনের একটি শ্লোগান নজরে পড়বে। শ্লোগানটি হলো 'জেনে রাখো, নিঃসন্দেহে হিযবুল্লাহ বিজয়ী।' এছাড়াও হিযবুল্লাহ তার প্রতিষ্ঠার ২৬ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখিয়ে দিয়েছে যে,তারা নিজেদের দলীয় স্বার্থে নয় বরং লেবাননের জনগণকে ইসরাইলী আধিপত্য ও নির্যাতন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যেই সংগ্রাম করে। এই সংগঠনটি জনকল্যাণমূলক কাজে কীভাবে আত্মনিবেদিত তা লেবাননবাসী খুব ভালো করেই জানে। হিযবুল্লাহ নিরীহ-বঞ্চিতদের সাহায্যে তাদের হাত সবসময় বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণেই হিযবুল্লাহর প্রতিরোধ আন্দোলন কেবল শিয়াদের কাছেই নয় বরং লেবাননের আহলে সুন্নাত,খ্রিষ্টান এবং দ্রুযদের কাছেও সমানভাবে জনপ্রিয়। হিযবুল্লাহর প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি জনগণের সমর্থনও ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিযবুল্লাহর বিজয়ের আরেকটি প্রধান কারণ। দক্ষিণ লেবানন দখলের বছরগুলোতে এবং ২০০৬ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধের সময় লেবাননের জনগণ ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হিযবুল্লাহকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা মোটেও পিছপা হয় নি। লেবাননের জনগণ তাদের প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে নিজেদের সন্তান বলে মনে করে।কেননা; তারা তাদের জীবনোৎসর্গ করে তাদের ধর্ম,দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্যে সংগ্রাম করে। এসবের বাইরেও হিযবুল্লাহর বিজয়ের পেছনে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর মতো সচেতন, সৎ, বিচক্ষণ ও দেশপ্রেমিক নেতারও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাআরিভ হিযবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে বন্দী বিনিময় সম্পর্কে লিখেছে-'ইসরাইল পরাজিত হয়েছে এবং হিযবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর ভাবমূর্তি ব্যাপক শক্তিশালী হয়েছে। ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ আরব বিশ্বের এক নম্বর নেতার শিরোপা অর্জন করেছেন। এই মহান স্বীকৃতি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে। #