Wednesday, September 3, 2008

পাশ্চাত্যের চলচ্চিত্রে ত্রাণকর্তার ধারণা ও দৃশ্য

চিন্তাবিদ ও দার্শনিকরা প্রাচীন যুগ থেকেই আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছেন। যেমন, প্লেটো তার কল্পিত ইউটোপিয়ায়, ফারাবী তার সূর্যের নগরে, টমাস ম্যুর তার কল্পিত পৃথিবীর স্বর্গে আদর্শ সমাজ বা দেশ গড়ার স্বপ্ন তুলে ধরেছেন। খোদায়ী ধর্মগুলোও মানুষকে ধ্বংস, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দানকারী সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের সুসংসবাদ সব সময়ই দিয়ে এসেছে। সর্বশেষ ত্রাণকর্তার শাসন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, সবার মধ্যে উচ্চ শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়া, ন্যায় বিচার, নিরাপত্তা, শান্তি এবং সবার জন্য সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু কথা হলো এই সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাব কবে, কোথায় ও কিভাবে হবে এবং কবে এই ইউটোপিয়া বা কল্পনা বাস্তবায়িত হবে? সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের যুগকে শেষ জামানা বা এপোক্যালিপসি বলা হয়। অবশ্য প্রত্যেক ধর্ম ও সম্প্রদায় ইতিহাসের শেষ অংশকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে চিত্রিত করে আসছে। এসব বর্ণনার অধিকাংশের মধ্যেই অক্ষ শক্তি বা অসত্যের পক্ষের শক্তিগুলোর সাথে সর্বশেষ ত্রাণকর্তার অনুগত বাহিনীর রক্তাক্ত ও ভয়াবহ যুদ্ধ ঘটার এবং এসব ত্রাণকর্তার অনুগত বাহিনীর বিজয়ী হবার কথা বলা হয়েছে।
সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের সময়ে সত্য ও মিথ্যার পক্ষের শক্তিগুলোর লড়াইয়ে সত্যের শক্তির তথা সর্বশেষ ত্রাণকর্তার বিজয়ের বিষয়টি বিভিন্ন উপন্যাস, গল্প বা চলচ্চিত্র তৈরির মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এমনকি ত্রাণকর্তাকে আদর্শ বা নায়ক হিসেবে ধরে নিয়ে শিশুদের জন্যেও অনেক গল্প ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি ও বিশেষ করে হলিউড অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। ভবিষ্যতের ব্যাপারে মানুষের জানার আগ্রহকে ব্যবহার করে চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ উপার্জন এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। আর এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্য উদ্দেশ্য হলো শেষ জামানা ও ত্রাণকর্তা সম্পর্কে পাশ্চাত্যের এবং ইহুদিবাদী মহলের চিন্তাধারা প্রচার করা। চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রথম দিকের কিছু ছায়াছবিসহ বিভিন্ন সময়ের এবং সাম্প্রতিক সময়েরও অনেক পশ্চিমা চলচ্চিত্র এ উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছে। ১৯১৫ সালে নির্মিত বার্থ অফ এ নেশন বা একটি জাতির জন্ম এমনই এক ছায়াছবি। ইহুদি ধর্মের বিকৃত হয়ে-যাওয়া চিন্তাধারা বা ইহুদিবাদী চিন্তা-ভাবনা এ ছায়াছবিতে ভরপুর। ছায়াছবিটির পরিচালক গ্রিফিথের বর্ণবাদী চিন্তাভাবনা এবং অ-ইহুদিদের প্রতি তার গভীর বিদ্বেষ এ ছায়াছবির গোটা পরিবেশকে কলুষিত করে রেখেছে।
এর পরের বছরগুলোতে ফিলিস্তিনে ইসরাইল নামের একটি অবৈধ ও দখলদার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন যোগানোর জন্য পাশ্চাত্যে অনেক ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে। হযরত মূসা (আঃ)'র টেন কমান্ডম্যান্টস বা দশ নির্দেশমালা ও বেনহুর নামের ছায়াছবিগুলো এ জন্যই তৈরি ও বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়। চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট সমালোচক ও বিশেষজ্ঞ এরিক রড এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এ ছায়াছবিগুলো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অনুসারে নির্মিত হয়েছে বলে বলা যায় না। ছবিগুলোর পরিচালক ঘটনার ক্ষেত্রে এতটাই হস্তক্ষেপ করেছেন যে, পরিচালক নিজেই খ্রিস্টানদের প্রতিক্রিয়াকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে এসব ছায়াছবি তৈরির কথা স্বীকার করেছেন। গত কয়েক দশকে টফলার, হাংটিনটন ও ফুকোইয়ামার মতো আধিপত্যকামী মার্কিন চিন্তাবিদ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় বিতর্কের কলেবরে অনেক সাম্রাজ্যবাদী ধারণা বা মতবাদ প্রচার করেছেন। আর এসব ধারণাও পাশ্চাত্যের অনেক ছায়াছবিতে সূক্ষ্ম কৌশলে প্রচার করা হচ্ছে। অবশ্য এ জন্য প্রধানতঃ ধর্মীয় আচ্ছাদন বা রং ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এসব আচ্ছাদনের ভেতর দিয়েও রাজনৈতিক বক্তব্য স্পষ্টভাবেই ধরা পড়ে। এ ধরনের একটি ছায়াছবির দৃষ্টান্ত হল, ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে বা স্বাধীনতা দিবস। ১৯৯৬ সালে নির্মিত এ ছায়াছবিতে দেখা যায় একটি মহাশুন্যযান পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বলে বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ঐ নভোযান থেকে আসা সিগনালগুলোর অর্থ বুঝতে পেরে নভোযানটিকে মোকাবেলা করার পদ্ধতি শিক্ষা দিতে থাকেন। ফলে নভোযানটি পৃথিবীতে হামলা করলে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রয়োগ করা কৌশলের মাধ্যমে তাকে পরাস্ত করা হয় এবং নভোযানটি পৃথিবী ছেড়ে পালিয়ে যায়। ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে বা স্বাধীনতা দিবস শীর্ষক এই ছায়াছবিতে মার্কিন ও ইহুদিবাদী নেতাদের অনেক মনোভাব তুলে ধরা হয়েছে এবং ত্রাণকর্তাকে ইহুদি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ ছায়াছবিতে পৃথিবীর শেষ সময় ঘনিয়ে আসার কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এবং ইহুদিরা যে এ জন্য খুশী তাও গোপন করা হয় নি। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ম্যাট্রিক্স নামের তিনটি ছায়াছবি নির্মাণ করা হয়। এসব ছায়াছবিতেও ভবিষ্যৎ ত্রাণকর্তার কথা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছবিগুলোর ঘটনাকে ২২০০ সালের বলে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সে সময় যন্ত্রদানব মানুষের মগজের ওপর আধিপত্য করবে। এ অবস্থায় নিও নামের একজন নির্বাচিত ব্যক্তিত্ব বা নায়ক ঐসব যন্ত্রদানবকে পরাজিত করে মানবজাতিকে মুক্ত করেন। যায়ন নামের পাহাড়ে গিয়ে (neo) নিও এই মুক্তির ব্যবস্থা নেন। যায়ন বা সাহইয়ুন পাহাড়টি রয়েছে ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দস শহরে। এভাবে দেখানো হয়েছে যে নতুন বা নিও নামের ত্রাণকর্তা মানুষকে জায়ন পাহাড়ের দিকে পরিচালিত করছেন। ইহুদিবাদীদের কথিত প্রতিশ্রুত-ভূমি বা দখলদার ইসরাইলের প্রতি দর্শকদের মনে ভালো ধারণা সৃষ্টির জন্যই যে এ ধরনের গল্প সাজানো হয়েছে তা স্পষ্ট। পাশ্চাত্যের চলচ্চিত্রে ইহুদিবাদ বা বিকৃত ইহুদি চিন্তাধারা তুলে ধরার পাশাপাশি ইসলামী চিন্তাধারা ও মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপরও আঘাত হানা হচ্ছে। ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টির জন্য ইসলামকে বিকৃতভাবে তুলে ধরার এ প্রচেষ্টার একটি নিদর্শন হলো দ্যা ম্যান হু স' টোমোরো বা যে লোকটি ভবিষ্যৎকে দেখেছেন শীর্ষক ছায়াছবি। ষোড়ষ শতকের গণক নস্ট্রাডমাসের ভবিষদ্বাণীর আলোকে নির্মিত হয়েছে এ ছায়াছবি। নস্ট্রাডমাসের ভবিষদ্বাণী শীর্ষক বইয়ের আলোকে মেট্রো গোল্ডেনমায়ার কোম্পানী এই ছায়াছবি নির্মাণ করে ইসলাম ধর্মে উল্লেখিত ভবিষ্যতের ত্রাণকর্তা বা হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। এ ছায়াছবিতে হযরত ইমাম মাহদী (আঃ)কে পুরোপুরি সত্যের বিপরীতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং তাঁর সম্পর্কে মুসলমানদের বিশ্বাসকে উপহাস করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরানের অধ্যাপক হাসান বুলখারি বলেছেন, হলিউডের ছায়াছবি এখন বেশ জোরালোভাবে শেষ ত্রাণকর্তার ধারণা প্রচার করছে। তারা একদিকে ইসলামের হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) সম্পর্কিত ধারণাকে আঘাত করছে বা বিকৃত করছে অন্যদিকে শেষ ত্রাণকর্তা সম্পর্কে নিজের আজগুবি কল্পনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে আমি এ কথা বলছি না, বরং হলিউডের ছায়াছবি বিশ্লেষণ করেই আমার মধ্যে এ ধারণা জন্মেছে।
জনাব হাসান বুলখারি আরো বলেছেন, সংকটপীড়িত মানুষ এখন ঐশী বা খোদায়ী সাহায্যের আশা করছে বা ভবিষ্যতের ত্রাণকর্তার জন্য অপেক্ষা করছে। হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) 'র দাওয়াতি কার্যক্রম তুলে ধরা মুসলমানসহ সবারই দায়িত্ব। আর এ জন্য গণমাধ্যম ব্যবহার করা জরুরী। আমি নিশ্চিত যে এ আহ্বান মানুষের মধ্যে সাড়া জাগাবে এবং এভাবে পাশ্চাত্যের প্রচার-যুদ্ধ মোকাবেলা করাও সম্ভব হবে। মানবজাতি যে শেষ ত্রাণকর্তা তথা হযরত ইমাম মাহদী (আঃ)'র আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার অন্যতম লক্ষণ হলো বিশ্বজয়ী বা অলৌকিক নায়কদের কাহিনীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। দর্শকদের কাছে স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান ও সুপারম্যান জাতীয় নায়ক চরিত্রের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এর প্রমাণ। দ্যা ডার্ক নাইট বা অন্ধকারের বিজয়ী বীর শীর্ষক ছায়াছবি এ ধারারই আরেকটি সংযোজন। রেকর্ড পরিমাণে এ ছায়াছবির কপি বিক্রির ঘটনায় বোঝা যায় মুক্তির জন্য অধীর মানব জাতি বর্তমান যুগের সংকট থেকে রক্ষা পেতে চায়। এটা স্পষ্ট হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) যখন আবির্ভূত হবেন তখন সমস্ত মুক্তি-পাগল মানুষ তাঁকে সাদরে বরণ করে নেবে এবং আলোর অফুরাণ বন্যায় কেটে যাবে জুলুম ও অন্যায়-অবিচারের নিকষ আঁধার। তাই এই মহান ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের পটভূমি তৈরির জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রচার মাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে এবং হযরত ইমাম মাহদী (আঃ)'র পরিচিতি তুলে ধরার জন্যও মুসলমানদেরকে আরো বেশী সক্রিয় হতে হবে।#

Monday, August 11, 2008

আরব বিশ্বের পানি সম্পদ জবর দখলের ইসরাইলী অপচেষ্টা

ইহুদীবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ইহুদীবাদী নেতারা আরব দেশগুলোর পানি সম্পদ দখল ও তা প্রত্যাহার করে ইসরাইলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। এ কারণে আরব দেশগুলো বিশেষ করে ফিলিস্তিনী জনগণ ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের পানি সম্পদ বিভাগের প্রধান ফজল কাউশ এ সম্পর্কে বলেছেন, ইসরাইলীরা জর্দান নদীর শতকরা ৪৫ ভাগ পানি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ফজল কাউশ আরো বলেছেন, জর্দান নদীর ৮৫ কোটি কিউসেক পানির মধ্যে ফিলিস্তিনীরা মাত্র ৮ কোটি ৫০ লাখ কিউসেক পানি ব্যবহার করতে পারছে। ইহুদীবাদী ইসরাইল ঐ নদীর বাকি পানি বাঁধ দিয়ে প্রত্যাহার করে নিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গাজা উপত্যকার ওপর ইসরাইলী দখলদারিত্বের সময় তেলআবিব গাজা থেকেও বেশীর ভাগ পানি চুরি করে নিয়ে যেত। গাজার পানি সম্পদের পরিমাণ বছরে ২০ কোটি কিউসেক বলে ধরা হয়। তবে গাজা থেকে ইসরাইলী সেনা প্রত্যাহার করার পর ইহুদীবাদীরা ঐ উপত্যকার পানিসম্পদ আর চুরি করতে পারছে না। কিন্তু ইহুদীবাদী ইসরাইল কর্তৃক জর্দান নদীর পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রয়েছে। সিরিয়া ও জর্দানের ভেতর দিয়ে বয়ে আসা নদী ইয়ারমুক থেকেও ইসরাইল বছরে ১০ কোটি কিউসেক পানি সরিয়ে নিচ্ছে। দক্ষিণ লেবানন যখন ইসরাইলের দখলে ছিল, তখন সেখানকার তিনটি নদীর পানি ইহুদীবাদীরা চুরি করতো এবং এর পরিমাণ ছিল ৭০ কোটি কিউসেক। কিন্তু হিযবুল্লাহর তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখে ২০০০ সালে ইহুদীবাদী সরকার দক্ষিণ লেবানন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তারপরও তারা লেবাননের পানি চুরি করা বন্ধ রাখে নি। তারা খাল খনন ও পাইপ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে লেবাননের পানি ইসরাইলে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। গোলান মালভূমি দখল করে ইহুদীবাদীরা সিরিয়ার ৬০ কোটি কিউসেক পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এদিকে ইসরাইলের বার্ষিক পানির চাহিদা ২০০০ সালে ছিল ২৩০ কোটি কিউসেক, যা ২০২০ সালে ৩১০ কোটি কিউসেকে গিয়ে দাঁড়াবে। কাজেই ইসরাইলের পানি চাহিদার এ হিসাব থেকে বোঝা যায়, অবৈধ ঐ রাষ্ট্রটি তার ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটানোর জন্য আগামী দিনগুলোতে আরব দেশগুলোর আরো বেশী পানির উৎস দখলের চেষ্টা করবে। তার তা করতে গেলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়বে। বর্তমানে ইসরাইল তুরস্কের বিভিন্ন নদী এবং মিশরের নীল নদ থেকে পানি আনার পরিকল্পনা মাথায় রেখেছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, ইহুদীবাদী ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে তার আগ্রাসী নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আরব দেশগুলোর পানিসম্পদ কূক্ষিগত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের পানি সম্পদের ওপর তেলআবিবের লোলুপ দৃষ্টি সব সময়ই ছিল। কথিত শান্তি আলোচনার মাধ্যমে যদি এসব পানির উৎসের নাগাল পাওয়া যায় তো ভালো, তা না হলে যুদ্ধ ও আগ্রাসনের মাধ্যমে এগুলো দখল করা ছিল ইসরাইলের অন্যতম নীতি। নীল নদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত ইসরাইলের সীমানা বিস্তৃত করার যে ধৃষ্ঠতাপূর্ণ ঘোষণা ইহুদীবাদী নেতারা দিয়েছিল, তার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আরব দেশগুলোর পানি সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ, শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমানা বৃদ্ধি করার জন্য নয়, সেই সাথে আরব দেশগুলোর পানি সম্পদের ওপরও জবর দখল প্রতিষ্ঠা করা ছিল নীল নদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত ইসরাইলের সীমানা বৃদ্ধি করা সংক্রান্ত ঘোষণার অন্যতম উদ্দেশ্য। ওয়ার্ল্ড ওয়াটার রিসার্স সেন্টারের অন্যতম গবেষক রোস্টভা এ সম্পর্কে বলেছেন, ইসরাইল তার পতাকায় সাদা ভূমির ওপর যে নীল রংয়ের তারকা চিহ্ণ এঁকেছে, তার মধ্যেও আরবদের পানি সম্পদ কূক্ষিগত করার বাসনা লুকিয়ে আছে। ঐ নীল রংয়ের দাগগুলো হচ্ছে নীল ও ফোরাত নদীর কাল্পনিক প্রতীক। ইহুদীবাদী নেতাদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে ওয়ার্ল্ড ওয়াটার রিসার্স সেন্টারের ঐ গবেষকের কথার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইহুদীবাদী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্তযেল যখন মধ্যপ্রাচ্যের বুকে একটি বৃহৎ ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল, তখন অন্য সব কিছুর আগে সে কল্পিত ঐ রাষ্ট্রের পানি চাহিদা কীভাবে মেটানো হবে, সে বিষয়টি মাথায় রেখেছিল। হার্তযেল ১৮৮৬ সালে নীল নদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত বিস্তৃত ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছিল, ভবিষ্যতে যারা ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করবে তাদের নেতৃত্বে থাকবে পানি বিষয়ক কিছু বিশেষজ্ঞ। ঐ ইহুদীবাদী নেতা ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাল শহরের বিখ্যাত সম্মেলনে বলেছিল, ইসরাইলের সীমান্ত আগামী ৫০ বছর নাগাদ উত্তর লিথুনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বিন গোরিওন ১৯৫৫ সালে ইসরাইলের পানির উৎস সম্পর্কে বলেছিল, বর্তমানে ইসরাইল- পানি সম্পদের উৎস দখল করার জন্য আরবদের সাথে যুদ্ধ করছে। কাজেই এ যুদ্ধের ফলাফলের ওপর ইসরাইলের ভবিষ্যত অস্তিত্ব সরাসরি নির্ভরশীল। বিন গোরিওন আরো বলেছিল, আরবদের সাথে ঐ যুদ্ধে পরাজিত হলে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ইসরাইলের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। ইসরাইলের একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়েবেন এ সম্পর্কে বলেছেন, ইহুদীবাদী ইসরাইলের দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্যে সেদিনই স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, যেদিন আরব দেশগুলোর সকল পানি সম্পদের ওপর তেলআবিবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে।

Wednesday, July 30, 2008

হিজবুল্লাহর বিজয়ের নেপথ্যে-২

গত ১৬ জুলাই ছিল লেবাননের জনগণ ও সেদেশের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের ইতিহাসে আরেকটি ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন ইসরাইল লেবাননী শহীদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দিয়েছিল। পক্ষান্তরে লেবানন ইসরাইলের ২ মৃত সেনার লাশ ইসরাইলকে ফেরত দিয়েছে। বন্দী বিনিময়ের এই ঘটনাকে লেবাননের হিযবুল্লাহর ঐতিহাসিক বিজয় বলে মন্তব্য করেছে স্বয়ং অধিকৃত ফিলিস্তিনের দৈনিক ইয়াদিউত অহরুনুত।
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধের সাম্প্রতিক বিজয়ের বিভিন্ন দিক রয়েছে।ইসরাইল সবসময়ই নিজেদের গোয়েন্দা বিভাগের পটুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কথা বলে এবং ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে হত্যা করার ক্ষেত্রে তাদেরকে কাজে লাগায়। কিন্তু বন্দী বিনিময় এবং লেবাননী শহীদদের লাশ ফেরত দেওয়ার ঘটনায় ইসরাইলী এই গোয়েন্দা বিভাগ মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা লেবাননের হিযবুল্লাহর কাছে ইসরাইলীদের যে দুই সেনা ছিল,তারা যে যুদ্ধ চলাকালে আহত হবার পর মারা গিয়েছিল সেই তথ্য তাদের জানা ছিল না। তারা ভেবেছিল তাদের ঐ ২ সেনা জীবিত আছে।
অপরদিকে ইসরাইল বাধ্য হয়েছে তাদের ২ সেনাকে ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে ৫ জন বন্দী এবং লেবাননী-অলেবাননী ২০০টি লাশ হিযবুল্লাহর হাতে বুঝিয়ে দিতে। এ কারণে তেলাবিবের অনেক কর্মকর্তা বন্দী বিনিময়ের দিনটিকে ইসরাইলের ইতিহাসে একটি কালো দিবস বলে উল্লেখ করেছে। ইসরাইলের যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন-'বন্দী বিনিময় ইসরাইলের দুর্বলতাকে সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।' তিনি তাই ইসরাইলী গণমাধ্যমগুলোকে বলেছেন বন্দী বিনিময়ের খবরটিকে যেন ফলাও করে না ছাপে। এ সম্পর্কে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টও লিখেছে ইসরাইলের এই পরাজয়ের ঘটনা বিশ্বব্যাপী এবং ইসরাইলের অভ্যন্তরেও তাদের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে। বিশ্বের আরো বহু দৈনিকও ইসরাইলের বিরুদ্ধে লেবাননের হিযবুল্লাহর ঐতিহাসিক বিজয়কে ফলাও করে তুলে ধরেছে। কোনো কোনো পত্রিকা এটাকে লেবানননের জাতীয় বিজয় বলেও মন্তব্য করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি মুন এবং বিশ্বের বহু দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে লেবাননের এই বিজয়ে সেদেশের জনগণ ও প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দিত করেছে। এই বিজয়ের ফলে আরো যে বিশাল সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাহলো,লেবাননের অভ্যন্তরে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হয়েছে।হিযবুল্লাহর উপমহাসচিব শায়েখ নাঈম কাসেম দৈনিক আল-আরাবকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন-'বন্দী বিনিময়ের ঘটনা একদিকে যেমন লেবাননের জনগণের মাঝে ঐক্য ও সংহতির বিষয়টি ফুটিয়ে তোলে,তেমনি এর ফলে বন্দীদেরকে মুক্ত করার ব্যাপারে লেবাননী জনগণ ও সরকার যে আন্তরিক তা-ও প্রমাণিত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাটি লেবাননের অভ্যন্তরে একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'
বন্দী বিনিময়ের ফলে আরো যে বিষয়টি হিযবুল্লাহর জন্যে ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছে তাহলো,এর ফলে প্রমাণিত হলো যে হিযবুল্লাহ তাদের সেনাদের ব্যাপারে এমনকি শহীদদের লাশের ব্যাপারেও ভীষণ আন্তরিক ও দায়িত্বশীল।তারা যে মানবিক বিষয়গুলোর কথা ভুলে যায় না-এরফলে তাও প্রমাণিত হলো। শহীদদের লাশ ফিরে পেয়ে শহীদ পরিবারের লোকজন ভীষণ খুশি হয়েছে। তারচেয়েও বেশি খুশি হয়েছে সেইসব পরিবার যারা বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করার পর বন্দীদেরকে তাদের মাঝে জীবিতাবস্থায় পুনরায় ফিরে পেয়েছে। যারা শহীদ হয়েছে কিংবা বন্দী ছিল,তাদের মাঝে হিযবুল্লাহর বাইরেও অন্যান্য দলের সদস্য ছিল।
এ থেকে বোঝা যায় যে হিযবুল্লাহ কেবল স্বার্থপরের মতো নিজেদের শহীদদের ব্যাপারেই তৎপরতা চালায় নি বরং তারা দল-মত নির্বিশেষে পরিপূর্ণ ইসলামী মানবিক আচরণ করে সকল বন্দীর জন্যেই সমানভাবে চেষ্টা চালিয়েছে। সামির কান্তারের মুক্তিই তার প্রমাণ। কেননা সামির কান্তার ৩০ বছর আগে অর্থাৎ হিযবুল্লাহ নামক সংগঠনটি গঠিত হবারও আগে ইসরাইলীদের হাতে বন্দী হয়েছিল। তাকে মুক্ত করার জন্যে হিযবুল্লাহ যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে,সেই প্রচেষ্টার ফলে সামির কান্তার এতো বেশি প্রভাবিত হয়েছে যে,সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে তিনি তাঁর নেতা এবং শিক্ষক বলে মন্তব্য করতেও কুণ্ঠিত হন নি। তিনি বলেছেন-তাঁর ভাষায়-'গতকাল পর্যন্ত শত্রুদের হাতে বন্দী ছিলাম,কিন্তু আজ থেকে আরো বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়ে যাবো।'
মজার ব্যাপার হলো,হিযবুল্লাহ অন্যান্য দেশের বন্দীদের মুক্তির জন্যেও বিশেষ করে ফিলিস্তিনী বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে হিযবুল্লাহ নেতা জনাব হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, 'বন্দী বিনিময়ের ক্ষেত্রে ইসরাইলীদের হাতে বন্দী ফিলিস্তিনীদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্যেও আমরা জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম। জাতিসংঘকে লেখা আমাদের চিঠিপত্রগুলোতে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বিধৃত আছে।' লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিযবুল্লাহ,আরব লীগকেও অনুরোধ করেছে,তারা যেন ইসরাইলীদের কারাগারে বন্দী আরব ও ফিলিস্তিনীদের মুক্তি দেওয়ার জন্যে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানায়।
ইসরাইলী কারাগার থেকে মুক্ত বন্দীদের অভ্যর্থনা জানানোর অনুষ্ঠানে হিযবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন-'সকল প্রতিরোধ আন্দোলন এবং এ অঞ্চলকে জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্ত করার জন্যে যারাই চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,তাদের পরিচয়, তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আসলে এক এবং অভিন্ন,তাহলো-দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা'।লেবাননের জনগণ অত্যন্ত সচেতনতা এবং বিচক্ষণতার সাথে এই প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে। এই সংগ্রামের মাধ্যমেই হিযবুল্লাহ ইসরাইলকে পতনের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে। জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে অত্যাচারীদেরকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করা এবং নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন ইরাক কিংবা ফিলিস্তিনের মতো দখলদারদের যাঁতাকলে পিষ্ট দেশগুলোর জন্যে সফলতার এক অনন্য আদর্শ ও নিদর্শন। #

Thursday, July 24, 2008

হিযবুল্লাহর বিজয়ের নেপথ্যে-১

গত ১৬ জুলাই ছিল লেবাননের জনগণ ও সেদেশের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের ইতিহাসে আরেকটি ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় দিন। লেবাননের হিযবুল্লাহ জার্মান সরকারের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে পরোক্ষভাবে দীর্ঘ আলোচনার পর তাঁদের ৫ জন বন্দী এবং অন্তত ২০০ শহীদের লাশ দেশে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে। পক্ষান্তরে হিযবুল্লাহ ইসরাইলী ২ সেনার লাশ অধিকৃত ফিলিস্তিনে ফেরত পাঠিয়েছে। ইসরাইল ভেবেছিলো তাদের ঐ সেনা জীবিত আছে।এর মধ্য দিয়ে বিগত ৮ বছরে ইসরাইলের মোকাবেলায় হিযবুল্লাহর তৃতীয় বিজয় অর্জিত হলো। এরফলে ইসলামী গণআন্দোলন হিযবুল্লাহ ইসরাইলের সামনে তাদের শক্তিমত্তাই প্রমাণ করলো। হিযবুল্লাহ তাদের এই অভিযানকে ক'মাস আগে সিরিয়ায় ইসরাইলী গোয়েন্দাদের হাতে শহীদ ইমাদ মুগনিয়ার নামে নামকরণ করেছে। মুগনিয়া হাজ্জ্ব রেজোয়ান নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। সেজন্যে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে রেজোয়ান অভিযান। যাই হোক হিযবুল্লাহর এই মহান অর্জনকে নিয়ে আমরা আরো কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো। ইসরাইলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেবাননের সাথে বন্দী বিনিময়ের দিনটিকে তাদের দেশের জন্যে শোক দিবস বলে মন্তব্য করেছেন।ইসরাইলী দৈনিক ইয়াদিউত অহরুনুত এ সম্পর্কে লিখেছে, 'ইসরাইলীরা বেদনার অশ্রু ঝরাচ্ছে আর লেবাননীরা ঝরাচ্ছে গর্ব ও আনন্দের অশ্রু।' ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীরা বছরের পর বছর ধরে সংগ্রাম চালাবার পর ২০০০ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো ইসরাইলী সেনাদেরকে দক্ষিণ লেবানন থেকে তাড়াতে সক্ষম হয়। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ইসরাইলী সেনারা হিযবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় লেবাননের ওপর হামলা চালায়। কিন্তু ৩৩ দিন যুদ্ধ করার পর লেবাননের জনগণ এবং হিযবুল্লাহর পর্বত কঠিন প্রতিরোধের মুখে ইসরাইল মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয় এবং তাদের নৃশংস হামলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে লেবাননের হিযবুল্লাহর তৃতীয় বিজয় অর্জিত হয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিযবুল্লাহর শহীদদের লাশ এবং বন্দীদের ফেরত আনার মাধ্যমে। বিগত কয়েক মাস ইসরাইলের সাথে আলোচনাকালে তারা লেবাননী বন্দী ও শহীদদের লাশ ফেরত দিতে অস্বীকার করে আসছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিযবুল্লাহর চাপের মুখে তারা কেবল লেবাননী শহীদদের লাশ এবং বন্দীদেরকেই ফেরত দিতে বাধ্য হয় নি বরং বন্দী বিনিময়ের পূর্ব মহূর্ত পর্যন্ত তারা জানতেও পারে নি যে তাদের ঐ দুই সৈন্য যুদ্ধে নিহত হয়েছে। হিযবুল্লাহর বিজয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি সামনে আসে তাহলো অন্যান্য আরব দেশ সুসজ্জিত সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও এবং উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত এ ধরণের বিজয় অর্জন করতে পারলো না! ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিযবুল্লাহর বিজয়ের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো,হিযবুল্লাহর মুমিন সংগ্রামীদের আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতা এবং তাদের মুজাহিদদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য। এ কারণেই হিযবুল্লাহর পতাকায় কোরআনের একটি শ্লোগান নজরে পড়বে। শ্লোগানটি হলো ‌'জেনে রাখো, নিঃসন্দেহে হিযবুল্লাহ বিজয়ী।' এছাড়াও হিযবুল্লাহ তার প্রতিষ্ঠার ২৬ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখিয়ে দিয়েছে যে,তারা নিজেদের দলীয় স্বার্থে নয় বরং লেবাননের জনগণকে ইসরাইলী আধিপত্য ও নির্যাতন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যেই সংগ্রাম করে। এই সংগঠনটি জনকল্যাণমূলক কাজে কীভাবে আত্মনিবেদিত তা লেবাননবাসী খুব ভালো করেই জানে। হিযবুল্লাহ নিরীহ-বঞ্চিতদের সাহায্যে তাদের হাত সবসময় বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণেই হিযবুল্লাহর প্রতিরোধ আন্দোলন কেবল শিয়াদের কাছেই নয় বরং লেবাননের আহলে সুন্নাত,খ্রিষ্টান এবং দ্রুযদের কাছেও সমানভাবে জনপ্রিয়। হিযবুল্লাহর প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি জনগণের সমর্থনও ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিযবুল্লাহর বিজয়ের আরেকটি প্রধান কারণ। দক্ষিণ লেবানন দখলের বছরগুলোতে এবং ২০০৬ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধের সময় লেবাননের জনগণ ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হিযবুল্লাহকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা মোটেও পিছপা হয় নি। লেবাননের জনগণ তাদের প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে নিজেদের সন্তান বলে মনে করে।কেননা; তারা তাদের জীবনোৎসর্গ করে তাদের ধর্ম,দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্যে সংগ্রাম করে। এসবের বাইরেও হিযবুল্লাহর বিজয়ের পেছনে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর মতো সচেতন, সৎ, বিচক্ষণ ও দেশপ্রেমিক নেতারও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাআরিভ হিযবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে বন্দী বিনিময় সম্পর্কে লিখেছে-'ইসরাইল পরাজিত হয়েছে এবং হিযবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর ভাবমূর্তি ব্যাপক শক্তিশালী হয়েছে। ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ আরব বিশ্বের এক নম্বর নেতার শিরোপা অর্জন করেছেন। এই মহান স্বীকৃতি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে। #

Saturday, July 19, 2008

ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কে মহিলাদের হিজাব রক্ষার দাবী

তুরস্কের ইসলাম বিদ্বেষী ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী সেদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়েদের হিজাব বা ইসলামী শালীন পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার হঠকারি দাবী এখনও অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতাধর এই ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী নিজেকে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের প্রবর্তিত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার উত্তরসূরী বলে মনে করে। তুরস্কের ধর্ম নিরপেক্ষ মহল জেনারেল কেনান এভরানের নেতৃত্বে ১৯৮২ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করে । ক্ষমতা দখলের পর তারা সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের হিজাব বা পর্দার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তুরস্কে মহিলাদের মধ্যে হিজাব বৃদ্ধি পাওয়ায়, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের মধ্যে হিজাব ছড়িয়ে পড়ায় ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীরা এই পদক্ষেপ নেয়। এ পদক্ষেপের ফলে হাজার হাজার তুর্কী মহিলা ও মেয়েরা শিক্ষার এবং চাকরীর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তুরস্কের প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ জনগণ মুসলমান। বিগত ৮০ বছর ধরে তুরস্কের ইসলাম বিদ্বেষী ধর্ম নিরপেক্ষ মহল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে এবং ধর্মীয় তৎপরতার ওপর নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সর্বসাম্প্রতিক জনমত জরীপে দেখা গেছে, শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশী তুর্কী মহিলা হিজাবকে সমর্থন করছে এবং শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশী তুর্কী মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সংসদীয় আইন বাতিল করার বিরোধী। তুরস্কের জনগণ তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য এ পর্যন্ত অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, তারা মহিলাদের হিজাবের সমর্থক জাস্টিস ও ডেভলপমেন্ট পার্টিকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদসহ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিকারী এই দলটি এখন ইসলাম বিদ্বেষী সংখ্যালঘিষ্ঠ ধর্মনিরপেক্ষ মহলের ক্ষমতার খুটি তথা সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার সম্মুখীন । স্যেকুলার এই গোষ্ঠী বলছে, হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল কামাল আতাতুর্কের প্রবর্তিত স্যেকুলার মূল্যবোধের বিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে। তুরস্কের মুসলিম মহিলারা হিজাব বা পর্দাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজ অধিকার আদায়ের জন্য অনেক কস্ট সহ্য করেছে। যেমন, নূরায়ী জানান বাজিরগান নামের এক তুর্কী মহিলাকে হিজাব বা পর্দা মেনে চলার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়ে দশ বছর ধরে কারাগারে থাকতে হয়েছে। এরপর তিনি বাধ্য হয়ে তুরস্ক ত্যাগ করেন এবং এমনকি তার এক সন্তানকেও হারিয়েছেন। কিছু দিন আগে বেগাম নূরায়ী একজন সমমনা ব্যক্তির সাথে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ)কে শ্রদ্ধা করেন কিনা – এ প্রশ্ন করা হলে তিনি ইতিবাচক জবাব দেন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ক্বতেহ আলতায়লি এরপর তাকে প্রশ্ন করেন, আতাতুর্ককেও কি ভালবাসেন? উত্তরে বেগাম নূরায়ী বলেন, আমার ওপর যদি কোনো অত্যাচার করা না হয়, তাহলে আমি বলবো , আতাতুর্ককে পছন্দ করি না। ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য তুর্কী মহিলারাও বেগাম নূরায়ীর মতকে সমর্থন জানায়। কিন্তু তুরস্কের ইসলাম বিদ্বেষী ধর্ম নিরপেক্ষ মহল এ সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে। বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগান দৈনিক তুর্কী টাইমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ)'র প্রতি তার শ্রদ্ধার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে বলেন, আমার মতে মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ) একজন বিজ্ঞ ও জ্ঞানী নেতা এবং একইসাথে তিনি আমাদের বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতীম প্রতিবেশী দেশের নেতা। ইমাম খোমেনী (রঃ) একজন মুমিন মুসলমান এবং তিনি এমন এক আন্দোলনের নেতা ছিলেন যিনি একনায়ক বা স্বৈরাচারি শাহের কাছ থেকে জাতির জন্য গৌরবময় স্বাধীনতা বা মুক্তি এনে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ ছাড়াও তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধার আরেকটি কারণ হলো, তিনি বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তিনি খুবই সাধারণ মানুষের মতো সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন। ইমাম খোমেনী (রঃ) ইরানকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং তিনি ইহুদিবাদী ইসরাইলের শত্রু ছিলেন। কিন্তু তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এ অঞ্চল দখলদার ইসরাইল ও মার্কিন সরকারের বন্ধু এবং তুরস্ক তাদের পরোক্ষ উপনিবেশ মাত্র। তুরস্কে দেশটির ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সমালোচনা করা বড় রকমের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ জন্য সমালোচককে প্রচারণাগত হামলার শিকার হওয়া ছাড়াও হুমকী এবং গ্রেফতারের শিকার হতে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামপন্থী, সাহসী ও বীরাঙ্গনা তুর্কী নারী বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগান তুরস্কের ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ককে পছন্দ না করার কারণ সম্পর্কে বলেছেন, আতাতুর্কের জীবন যাপন পদ্ধতি ও বিশ্বাসের সাথে আমার জীবন যাপন পদ্ধতি ও বিশ্বাসের আকাশ-পাতাল তফাৎ রয়েছে। এ কারণে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয় এবং স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব আমার নেই। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা আতাতুর্ক ও তুরস্ককে অভিন্ন মনে করেন। তাই আপনার চিন্তাধারা যদি আতাতুর্কের চিন্তাধারার বিরোধী হয় তাহলে তারা আপনাকে তুরস্কের শত্রু বলে তুলে ধরবে। এটাই চরম কামালবাদী বা গোঁড়া আতাতুর্কপন্থীদের যুক্তি। অথচ আতাতুর্কের বিরোধীতা করা বা তার সমর্থন করা আমার স্বাভাবিক অধিকার। তুরস্কের জন্য ইসলামবিদ্বেষী ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের এ ধরনের আচরণের অর্থ হলো, নীরব থাকো এবং হিজাব ও আতাতুর্কের ব্যাপারে মাথা ঘামিও না। কাউকে প্রশ্নের সম্মুখীন করবে না, বরং কেবল আনুগত্য করে যাও, আমরা যেমনটি চাই তোমার অনুভুতি হতে হবে ঠিক সেরকম। ইসলামপন্থী, সাহসী ও বীরাঙ্গনা তুর্কী নারী বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগান আরও বলেছেন, তুরস্কের অনেকেই আতাতুর্কের চিন্তাধারা পছন্দ করেন না, কিন্তু তা প্রকাশ করার সাহস রাখে না। বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগান ১৯৯৮ সাল থেকে নিজ ধর্ম ও পর্দা রক্ষা করার জন্য সংগ্রামের কারণেই এ রকম সাহসী হতে পেরেছেন। সে বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে হিজাব পরার কারণে তুর্কী পুলিশ তাকে পরীক্ষার হলে মারধোর করে এবং কারাগারে নিয়ে যায়। তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হিজাবধারী ছাত্রীদের সাথে আলোচনা ও তাদের সাথে যোগাযোগের প্রভাবে বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগান ১৪-১৫ বছর বয়স থেকেই পর্দা বা হিজাব বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগান আবারও চরম তিক্ত পরিস্থিতির শিকার হন যখন তাকে দ্বিতীয়বারের মতো কারাগারে নেয়া হয়। তীব্র মানসিক নির্যাতন ও দূর্বলতার কারণে তিনি তার যমজ সন্তানের একজনকে হারান। এর পরের বছর নিজের ও পরিবারের ওপর উপর্যপরি হুমকীর প্রেক্ষাপটে বাজিরগান কানাডায় পাড়ি জমান। সেখানে পড়াশুনা অব্যাহত রাখার পর তিনি ২০০৬ সালে আবার তুরস্কে ফিরে আসেন। কারণ তিনি তার মাতৃভূমি তুরস্ককে ভালবাসেন। বেগাম নূরায়ী জানান, বাজিরগানের মতো নারীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ধর্মহীনতাবাদী বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ইসলামবিদ্বেষী ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও ইসলামের প্রতি তাঁদের গভীর মমত্ববোধ অটুট ও অম্লান থেকে যায়। তুরস্কের দৈনিক জামানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, হিজাব পরিহার করা তার কাছে নিজের মাথা কেটে ফেলার সমতুল্য। এ কারণে ব্যাপক চাপ সত্ত্বেও তিনি তার হিজাব বজায় রেখেছেন। এমনকি তার সাহসী বক্তব্যগুলো পরিহার করে নেয়ার জন্য তাকে বিপুল অংকের অর্থ দেয়ার প্রলোভনও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করে তিনি ইসলামী অবস্থানে অনড়ই রয়ে গেছেন। বেগাম নূরায়ী জানান বাজিরগান সঠিক যুক্তি ও পথে উপনীত হবার জন্য ইতিহাসে ফসিল হয়ে পড়া ব্যক্তিদের অনুসরণ না করে পবিত্র কোরআনের অনুসারী হবার আহ্বান জানান। মহান আল্লাহ পোশাকের মাধ্যমে বর্তমান যুগের নারীদের পরীক্ষা করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। হিজাব করার কারণে তুরস্কের যেসব মহিলা শিক্ষা ও চাকরীর মতো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বাজিরগান বলেছেন, হিজাব সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অফিস আদালতের কর্মকর্তা এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধার চেয়ে বেশী মূল্যবান। তুরস্কে হিজাবের পক্ষে দেশটির অধিকাংশ জনগণের সমর্থনের কারণে সেখানে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা খুব বেশী দিন বজায় রাখা সম্ভব হবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Wednesday, June 11, 2008

সামরিক ব্যয় ও অস্ত্র ব্যবসার শীর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র!

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় : স্টকহম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিপরির বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে একজন মানুষের পেছনে সামরিক খাতে ব্যয় হয় ২০২ ডলার করে ৷ গত এক দশকে দেশগুলোর সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৪৫ ভাগেরও বেশী ৷ গোটা বিশ্বে যখন বেড়ে চলেছে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সংখ্যা, ঠিক তখন তার চেয়েও বেশী গতিতে বেড়ে চলেছে গোটা বিশ্বের সামরিক ব্যয়৷ সুইডিস সংস্হা স্টকহম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট সিপরি তার বার্ষিক রিপোর্টে বলেছে গত এক দশকে বিশ্বের সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৪৫ ভাগেরও বেশী৷ এর মধ্যে কেবল গত বছরেই বেড়েছে ৬ ভাগ৷ সুইডিস সংস্হার হিসেব মতে গত বছর সারা বিশ্বে শান্তিরক্ষা অভিযানের সংখ্যা ছিলো ৬১টি৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এ সময়ের মধ্যে দেশগুলো সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ১৩শ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের বেশী যা মোট জিডিপির আড়াই শতাংশ৷ গড়ে একজন মানুষের পেছনে সামরিক ব্যয় হয়েছে ২০২ ৷ সুইডিস সংস্হার হিসেব মতে, গত বছর বিশাল অংকের এ সামরিক ব্যয়ের ৪৫ ভাগই করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার পরিমাণ ৫৪৭ বিলিয়ন ডলার৷ এর পরই রয়েছে ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স ও জাপান৷ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসা : অস্ত্র বেচা-কেনা,বর্তমান বিশ্বের জমজমাট ব্যবসাগুলোর মধ্যে অন্যতম ৷ বৃহৎ সামরিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিল এবং এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে ৷ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অস্ত্র বাজারে মার্কিন প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হোয়াইট হাউজ, ছয় হাজার সাতশ কোটি ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে,যা তৎকালিন বিশ্ব বাজারে মোট অস্ত্র বিক্রির ৫৫ শতাংশ ৷ ২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার মধ্য দিয়ে পেন্টাগনের জন্য আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং হোয়াইট হাউজ, ১১ ই সেপ্টেম্বরের অজুহাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আরও বেশি পরিমাণে অস্ত্র কিনতে উৎসাহিত করে ৷
নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা করে ৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অস্ত্র ক্রয়ের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং মার্কিন অস্ত্র ব্যবসা আরও জমজমাট হয়ে ওঠে ৷ বিশেষকরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষ থেকে অস্ত্র কেনার হিড়িক পড়ে যায় ৷ এর ফলে ২০০২ ও ২০০৩ সালে বিশ্বের সামরিক ব্যয় প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায় ৷ ২০০১ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার কোটি ডলার থেকে ১ হাজার তিনশ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে ৷ ২০০৬ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার একশ কোটি ডলারে পৌছেছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক ৷
২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বরের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ত্র বিক্রির মাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের অনেক দেশের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় এবং ২০০৬ সালে এ ধরনের দেশের সাথে সবচেয়ে বেশি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ৷ যে সব দেশের ওপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে, সেগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, সার্বিয়া, আযারবাইজান, আর্মেনিয়া ও তাজিকিস্তান অন্যতম ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সমরাস্ত্র বিক্রির জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে ৷ এর মধ্যে একটি হলো, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ উস্কে দেয়া এবং নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি করা ৷ বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও হানাহানি বৃদ্ধি মানেই অস্ত্র ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠা ৷ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই পেন্টাগন,ভারত-পাকিস্তান, তুরস্ক-গ্রীস এবং আযারবাইজান-আর্মেনিয়ার মতো চীর বৈরি দেশগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র বিক্রি করে থাকে ৷ মধ্যপ্রাচ্যে, ইসরাইল সৃষ্টি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর ইসরাইলের আগ্রাসনকেও এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে৷ মধ্যপ্রাচ্যে, ইসরাইলের যুদ্ধংদেহী অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ সৌদি আরব ও মিশর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ক্রয় করলেও শক্তির ভারসাম্য কখনোই সৃষ্টি হয় নি ৷ এর কারণ হলো, ইসরাইলের সম্মতি ছাড়া পেন্টাগন, আরব দেশগুলোকে অত্যাধুনিক কোন অস্ত্র সরবরাহ করে না ৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলকে প্রতি বছর তিনশ কোটি ডলার সাহায্য দিয়ে থাকে, যার বেশির ভাগই অস্ত্র কেনার জন্য খরচ করা হয় ৷
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অস্ত্র বিক্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবাস্তব ভীতি সৃষ্টি করে ৷ যুক্তরাষ্ট্র, তার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশকে এটা বুঝানোর চেষ্টা করে যে, সামনে মহা বিপদ অপেক্ষা করছে এবং তা মোকাবেলার জন্য আরও বেশি অস্ত্র কিনতে হবে ৷ ওয়াশিংটন, হুমকির জুজু ব্যবহার করে এ পর্যন্ত পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোতে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে৷ ১৯৯০ সালে সাদ্দাম, কুয়েতের ওপর হামলার পর সাদ্দাম ভীতিকে বড় করে তুলে ধরার মাধ্যমেও এসব দেশে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র বিক্রি করেছে ৷
পারস্য উপসাগরের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলো বিপুল তেল সম্পদের অধিকারী হবার কারণে এসব দেশের প্রতি সব সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদনকারীদের লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে ৷ বিশেষ করে তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর নতুন করে এসব দেশের প্রতি পেন্টাগনের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে ৷ এ কারণে গত কয়েক বছরে আরব দেশগুলোর তেল খাত থেকে অর্জিত অর্থের একটা বড় অংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর পকেটে ঢুকেছে৷ কিন্তু বাস্তবে এত বিপুল অর্থ দিয়ে কেনা এসব অস্ত্র কোন কাজে আসেনি এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর এসব অস্ত্র ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অস্ত্র ব্যবসা জমজমাট রাখার জন্য মাঝে মধ্যেই কল্পিত শত্রু সৃষ্টি করে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা ঘন ঘন এসব দেশ সফরের মাধ্যমে কোন একটি দেশকে শত্রু হিসেবে তুলে ধরে আরও উন্নত অস্ত্র কেনার জন্য উৎসাহিত করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার ইরানকে এসব দেশের জন্য হুমকি হিসেবে প্রচার করছে৷ কিন্তু বাস্তবে ইরান এসব দেশের জন্য কোন হুমকি তো নয়ই বরং তেহরান, পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বহু দিন ধরেই আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে ৷
অস্ত্র কেনাটাই কিন্তু শেষ কথা নয় ৷ এসব অস্ত্রের জন্য পরবর্তীতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়, আর এসব যন্ত্রাংশেরও যোগান দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷ এছাড়া, এসব অস্ত্র আমদানির পর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী করার জন্য মার্কিন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় ৷ মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে এসব অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দিতে হয় ৷ ফলে এজন্যেও আমদানি কারক দেশের বিপুল অর্থ খরচ হয়৷ এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রির পাশাপাশি এসব দেশকে নিজের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে ৷ এছাড়া, উন্নত অস্ত্র বিক্রির শর্ত হিসেবে এসব দেশের ওপর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক শর্ত চাপিয়ে দেয়া হয় ৷ উদাহরণ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে ৷ এই দেশটি প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলার দিয়ে ৮০ টি এফ-সিক্সটিন জঙ্গী বিমান কেনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ ভূখন্ডে সামরিক ঘাটি নির্মাণের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র ব্যবসা জমজমাট রাখার জন্য অনায়াসেই নিজের ঘোষিত মানদন্ড ও নীতি লংঘন করছে ৷ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের অগ্রনায়ক হিসেবে ঘোষণা করলেও পরক্ষণেই বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে নিজের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ৷ এসব দেশকে অগণতান্ত্রিক, মানবাধিকার লংঘনকারী ও সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্ণিত করে হোয়াইট হাউজই এসব দেশের বিরুদ্ধে এর আগে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের ফেডারেশন, হোয়াইট হাউজের দ্বিচারিতা সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে যেসব দেশকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, তার মধ্যে ৯০ শতাংশ দেশই সন্ত্রাসবাদকে লালন করে ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব স্ববিরোধী আচরনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তার আধিপত্য বজায় রাখতে চায় ৷ এছাড়া মার্কিন অস্ত্র উৎপাদনকারীদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখাও হোয়াইট হাউজের একটি বড় লক্ষ্য ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির সাথে অতীত কাল থেকেই দেশটির অস্ত্র কোম্পানিগুলোর ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এবং একারণেই হোয়াইট হাউজ, হালকা অস্ত্র বিক্রি সীমাবদ্ধ করার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ৷ একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার অস্ত্র নির্মাণ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্যে বিশ্বের অন্য প্রান্তের মানুষের জীবন ও সম্মান-মর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করছে এবং যেখানেই প্রয়োজন হচেছ যুদ্ধ-বিগ্রহ উস্কে দিচেছ৷ ফলে বিশ্বের বর্তমান অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির জন্য হোয়াইট হাউজই অনেকাংশে দায়ী ৷