Sunday, July 8, 2007

জাতিসংঘের উদ্যোগে মাওলানা রূমীর ৮০০-তম জন্মজয়ন্তী পালিত

গত মঙ্গলবার ছিল জাতিসংঘের ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব দিন৷ এ দিনে জাতিসংঘ এমন এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে নিজেকে ধন্য করেছে যিনি বিশ্বসাহিত্য ও বিশেষ করে অধ্যাত্মিক সাহিত্য অঙ্গনের বা আধ্যাত্মিক কবিকূলের সম্রাট হিসেবে খ্যাত৷ নিউইয়র্কের সন্ধ্যাবেলা যেন সভ্যতার ও নৈতিকতার এক অলৌকিক দিশারীর ৮০০ তম জন্ম-জয়ন্তীর ঔজ্জ্বল্যে আলোকিত ও হীরন্ময় হয়ে উঠেছিল৷ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অভূতপূর্ব পরিবেশে সেদিন মাওলানা জালাল উদ্দিন বালখী রূমি (রঃ)কে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং বিভিন্ন দেশের চিন্তাবিদ ও মাওলানা রূমির আধ্যাত্মিক কবিতার বহু ভক্ত বা অনুরাগী৷ সারগর্ভ ও চিন্তাউদ্দীপক আলোচনা অনুষ্ঠান ছাড়াও মনোজ্ঞ আধ্যাত্মিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ঐতিহাসিক সন্ধ্যা হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত৷
আধ্যাত্মিক কবি-সম্রাট মাওলানা জালাল উদ্দিন বালখী রূমি (রঃ)'র ৮০০-তম জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, বর্তমান বিশ্ব অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে মাওলানা রূমির চিন্তাধারা প্রচারের মুখাপেক্ষী৷ তিনি আরো বলেন, "মাওলানা রূমীর কাব্যসম্ভারে শান্তি এবং সভ্যতাগুলোর মধ্যে সংলাপের আবেদন বা বাণী প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে৷ আর এই বাণী হওয়া উচিত বিশ্ব সমাজের কর্মতত্‍পরতা বা আচরণের আদর্শ৷" জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, এই মহান কবির স্মরণ জাতিসংঘে সভ্যতাগুলোর ঐক্যের ধারণাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে৷ এই মহতী অনুষ্ঠানের আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বান কি মুন বলেন, আপনাদের অনেকেই মাওলানা রুমির একনিষ্ঠ ভক্ত বা অনুরাগী৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অনেক ব্যক্তিত্বসহ আপনারা যারা এখানে সমবেত হয়েছেন শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে আমি অত্যন্ত দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি যে, মাওলানা রূমি তার জন্মের আটশ বছর পর আজও জীবন্ত রয়েছেন৷ এই অনুষ্ঠান মাওলানা রূমির মানবিকতা বা মানব প্রেম, সহিষ্ণুতা, সমঝোতা ও দয়ার দর্শন তুলে ধরার এবং এসব দর্শনের প্রতি সম্মান জানানোর এক সূবর্ণ সুযোগ বয়ে এনেছে৷ বান কি মুন তার ভাষণে আরো বলেছেন, জাতিসংঘে মাওলানা রূমীর ৮০০ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের আয়োজকরা যেমনটি আশা করছেন আমিও ঠিক সেভাবেই আশা করছি যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব হাসিমুখে ও বিনম্রভাবে পালন করতে সক্ষম হব৷ যদিও আমি জানি যে এটা খুবই কঠিন দায়িত্ব, তবুও মাওলানা রূমি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন তারই আলোকে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী৷ জাতিসংঘের মহাসচিব এরপর বলেন, মাওলানা রূমির কবিতা কোনো একটি যুগ বা কালের গন্ডীতে সীমিত নয়, তবুও জাতিসংঘে মাওলানা রূমির কবিতার উত্‍সব অত্যন্ত উপযুক্ত সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ বিভিন্ন জাতি ও সমাজের মধ্যে সামপ্রতিক যুগে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা তাদের মধ্যে ব্যবধান বা দূরত্ব সৃষ্টি করেছে এবং পারস্পরিক অসহিষ্ণুতাসহ সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে৷ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্যে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো অত্যন্ত জরুরী৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তার ভাষণে আরো বলেছেন, "এইসব মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে আমাদের প্রত্যেককেই ব্যক্তি-স্বার্থের ব্যাপারে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করতে হবে৷ মাওলানা রূমীর রেখে যাওয়া শিক্ষা অনুযায়ী আমাদেরকে অবশ্যই জনগণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং তাদেরকে বিধাতার সৃষ্টি ও মানুষ হিসেবে ভালবাসতে হবে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আরো বলেন, মাওলানা রূমীকে স্মরণ বা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এই অনুষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষকে ঘনিষ্ঠ করার অশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদেরকে সচেতন করছে এবং এভাবে আমরা মাওলানার বিশ্ব দর্শনকে কাজে লাগাতে পারি৷ আর জাতিসংঘের উদ্যোগে এ ধরনের অনুষ্ঠান সভ্যতাগুলোর ঐক্যের মাধ্যমে শান্তির সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টার জন্যে সহায়ক হবে৷"
জাতিসংঘে আধ্যাত্মিক কবি-সম্রাট মাওলানা জালাল উদ্দিন বালখী রূমি (রঃ)'র ৮০০-তম জন্মজয়ন্তীর মহতী অনুষ্ঠানে ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তাবিদসহ জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও বক্তব্য রেখেছেন৷ এই অনুষ্ঠানের আলোচনা বা গবেষণামূলক পর্বে বিভিন্ন দেশের বক্তারা ফার্সীভাষী এই আধ্যাত্মিক মহাকবির জীবনের সাহিত্যিক, আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক বা জ্ঞানগত দিকের বিশ্লেষণ করেছেন৷ জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে ইরান, আফগানিস্তান ও তুরস্কের শিল্পীরা মাওলানা রুমি (রঃ)'র আধ্যাত্মিক বা মরমী কবিতা সংগীত ও গানের মাধ্যমে পরিবেশন করেন৷ এ ছাড়াও মার্কিন সরকার মাওলানা রূমি (রঃ)'র ৮০০ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করেছে৷ এ ডাক টিকেটে মাওলানা রূমির ছবি স্থান পেয়েছে৷ এই ছবির শিল্পী হলেন ইরানের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হোসাইন বেহজাদ৷ ওদিকে দুঃখজনক ঘটনা হলো, মার্কিন সরকার এবারসহ বেশ কয়েকবার ইরানী শিল্পীদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের ভিসা দেয়নি৷ ফলে ইরানের সংগীত দল জাতিসংঘের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারে নি৷
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালকে জাতিসংঘ রুমী বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মাওলানা জালাল উদ্দিন বালখী রূমি (রঃ)'র সংক্ষিপ্ত
ফার্সী ভাষায় মৌলভী হিসেবে সুপরিচিত জালালউদ্দিন মোঃ বালখী রুমী (রঃ) ইরানের বিখ্যাত সুফী-সাধক, আরেফ ও কবি৷ তিনি উত্তর ইরানের বালখে হিজরী সপ্তম শতকে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন৷ তার পিতার নাম বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ৷ বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন একজন বিখ্যাত শিক্ষক ও আরেফ৷ রূমির পিতা তার সন্তানের সুশিক্ষার দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷ ইরানের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলগুলোয় মোঙ্গলদের হামলা, গণহত্য ও তাদের লুটতরাজ বা ধ্বংসযজ্ঞ জোরদার হওয়ায় অনেক ইরানী পন্ডিত বা চিন্তাবিদ ইরান ত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ঐ পরিস্থিতিতে মাওলানা রূমী (রঃ)'র পিতাও পবিত্র কাবাঘর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সিরিয়া ও হিজাজে যাবার সিদ্ধান্ত নেন৷ মাওলানা রূমী (রঃ)'র পরিবার কিছুকাল বাগদাদ ও নিশাপুরে থাকার পর সিরিয়া ও হিজাজে যান৷ এরপর তারা মধ্য এশিয়ার লারান্দে ও সেখান থেকে বর্তমান তুরস্কের কুনিয়ায় যান৷ রূমি (রঃ) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই কুনিয়াতেই ছিলেন৷ মাওলানা রূমী (রঃ) তাঁর পিতা ছাড়াও সেযুগের অনেক বিখ্যাত শিক্ষকের সানি্নধ্য লাভ করেছিলেন৷ পিতার মৃত্যুর পর মাওলানা রূমী (রঃ) তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন৷ অসাধারন জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং আকর্ষণীয় গল্প ও কাব্যরসে সমৃদ্ধ তাঁর ভাষণ বা ক্লাসগুলো বিপুল সংখ্যক তত্ত্ব-পিপাসু ও জ্ঞানপিপাসুকে আকৃষ্ট করেছিল৷ সাত বৈঠক বা মাজালেসে সাবআ এবং ফি মা ফি শীর্ষক গ্রন্থ মাওলানা রূমি (রঃ)'র ভাষণ ও ক্লাসের ফসল৷ মসনভী ও দিওয়ানে শামস তাঁর দুটি অমর কীর্তি৷ মাওলানা রূমী হিজরী ৬৭২ সালে ৬৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন৷ কিন্তু তিনি আজো বেঁচে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন তাঁর অমর কাব্য ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা বা আদর্শের অক্ষয় কীর্তির মধ্যে৷ #

Wednesday, July 4, 2007

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি.আই.এ'র সাথে হলিউডের সহযোগিতা

সমপ্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি। আই।এ'র কর্মকর্তারা হলিউড-কোম্পানীগুলোর সাথে এক বৈঠকে সি। আই।এ'র দক্ষ কর্মকর্তা পল ব্যারিকে হলিউডের সাথে এই সংস্থার সমন্বয়ক বলে ঘোষণা করেছেন৷ মার্কিন বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ঐ বৈঠকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি. আই.এ' হলিউডকে তার সবচেয়ে দক্ষ ও সাহসী কর্মীদের নামের তালিকা সরবরাহের অনুরোধ করেছে যাতে এই কর্মীদেরকে সি. আই.এ'র লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহার করা যায়৷ সি. আই.এ'র মুখপাত্র পল কে. লিয়ানো হলিউডের সাথে ঐ বৈঠকে একটি বিবৃতি পড়ে শোনান৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি. আই.এ'র কর্মকর্তারা ঐ বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন যে হলিউডসহ অন্যান্য মার্কিন গণমাধ্যমের কর্মতত্‍পরতার ওপর সি আই এ'র সরাসরি নজরদারীর কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি. আই.এ দীর্ঘ বহু বছর ধরে নিজ লোকদেরকে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা শিল্পসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়োজিত করে এসব গণমাধ্যমকে দিয়ে পাশ্চাত্যের সমপ্রসারণকামী লক্ষ্যগুলো হাসিলের চেষ্টা করে আসছে৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি. আই.এ'র এই কৌশল ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে৷ যদিও মার্কিন চলচ্চিত্র সংস্থা হলিউড নতুন নতুন কৌশল খাটিয়ে দর্শক আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে, কিন্তু এ সংস্থার কাছ থেকে মার্কিন সরকার ও সি. আই.এ'র প্রত্যাশা এখানেই সীমিত নয়৷ মার্কিন সরকার হলিউডকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রত্যাশা মতো অন্যান্য জাতির ওপর বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ও পশ্চিমা সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চায়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইডিওলজি বা আদর্শ শীর্ষক এক সাড়া-জাগানো নিবন্ধে মিশরীয় বংশদ্ভুত ফরাসী অর্থনীতিবিদ সামির আমিন 'আমাদের মার্কিন বন্ধ'ু জাতীয় শব্দের ব্যাপারে প্রতারিত না হতে তার পাঠকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ মার্কিন সরকার যে কোনো দেশের বন্ধু হতে পারে না তার যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে সামির আমিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদাহরণ দিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, "রাজনৈতিক সংস্কৃতি ইতিহাসের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফসল৷ প্রত্যেক দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সেদেশের রাজনীতির নিজস্ব বৈশিষ্টের আলোকে গড়ে ওঠে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও নিউ ইংল্যান্ডের চরমপন্থী গ্রুপগুলোর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে৷ তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট হলো: আমেরিকা মহাদেশের স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর গণহত্যা চালানো, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে অন্যদেরকে দাসে পরিণত করা, আমেরিকায় অভিবাসী বিভিন্ন জাতি বা সমাজকে আলাদা করা এবং জাতিগত ও গোত্রীয় পার্থক্যগুলোকে বড় করে তুলে ধরা"৷ সামির আমিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রসঙ্গে আরো লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলের লোকেরা ফ্যাসিবাদীদের মতো নিজেকে সর্বোত্তম জাতি বলে মনে করে৷ তারা এও মনে করে যে স্রষ্টা তাদেরকে নিজ ধর্মের বিশ্বাসগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূখ্যাত বর্ণবাদী গোষ্ঠী ক্লু ক্লাঙ্ ক্লান ও ফ্রিম্যাশন গোষ্ঠীর মতো উগ্র গ্রুপগুলোর বিশ্বাস এবং চরমপন্থী চিন্তাধারায় বিশ্বাসীরাই শেষ পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি. আই.এ'র ছত্রচ্ছায়ায় একত্রিত হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও গুপ্ত সংস্থাগুলো চলচ্চিত্রের জগতকেও তাদের চিন্তাধারা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে৷ সামপ্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি. আই. এ নিজ লক্ষ্যের বিরোধী কোনো কোনো ছায়াছবির সমালোচনা করে সেগুলোকে অবাস্তব বলে আখ্যা দিয়েছে৷ হলিউড ও সি আই এ'র মধ্যে সমন্বয়কারী নিয়োগের খবর আপনারা এ আলোচনার শুরুতে জেনেছেন৷ এই নিয়োগের উদ্দেশ্য হলো মার্কিন সরকার ও সি আই এ'র লক্ষ্যের বিরোধী ছায়াছবি নির্মাণের সম্ভাবনা দূর করা৷ হলিউড ও সি আই এ'র মধ্যে সমন্বয়কারী নিয়োগের বৈঠকে এটা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো কোনো ছায়াছবি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সি আই এর চেহারা বিকৃত করে তুলে ধরেছে এবং এরফলে দর্শক ও শ্রোতাদের মধ্যে এই সংস্থা সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে৷ অনেক সমালোচক বলছেন, হলিউডে মাঝে মধ্যে এমন দু-একজন স্বাধীনচেতা ফিল্ম-নির্মাতা দেখা যায় যারা বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চান এবং তারা নিজ ছায়াছবিতে বাস্তবতা তুলে ধরছেন৷ স্বাধীন ছায়াছবি নামে পরিচিত এসব ছায়াছবিতে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়৷ গুড শেফার্ড বা ভালো রাখাল এ ধরনের একটি ছায়াছবির দৃষ্টান্ত৷ ২০০৬ সালে নির্মিত এ ছায়াছবিতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বা সি আই এ গঠনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে৷ গুড শেফার্ড বা ভালো রাখাল শীর্ষক ছায়াছবিটি এডওয়ার্ড উইলসন নামের এক ব্যক্তির জীবন কাহিনীর চিত্ররূপ৷ এই লোকটি সি আই এ গঠনে এবং ৬০'র দশকে মার্কিন এই গোয়েন্দা সংস্থার ধ্বংসাত্মক তত্‍পরতায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ গঠনের পটভূমি ও এর বিকাশ এবং এ সংস্থার অতীতের ও বর্তমান লক্ষ্যগুলো এই ছায়াছবিতে মেলোড্রামার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে৷ এ ছায়াছবিতে কিউবার বে অব পিগ বা পিগ উপসাগরে মার্কিন অনুচরদের হামলা এবং এ হামলায় মার্কিনীদের লজ্জাজনক পরাজয়ের কাহিনীও স্থান পেয়েছে৷ ফ্ল্যাশ-ব্যাক বা স্মৃতি রোমন্থন হিসেবে এডওয়ার্ড উইলসনের শৈশব এবং একটি গোপন সংস্থায় তার অন্তর্ভুক্তি ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা-সি আই এর গোড়া পত্তনের দৃশ্যগুলো এ ছায়াছবির আরেকটি আকর্ষণীয় দিক৷ নিরাপত্তার বিষয়ে দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তাহীনতা গুড শেফার্ড বা ভালো রাখাল শীর্ষক ছায়াছবির কেন্দ্রীয় বিষয়৷ রবার্ট ডোনিরো এই ছায়াছবির নির্মাতা৷ আসলে ভালো রাখাল নামের ছায়াছবিতে এটা দেখানো হয়েছে যে, সি আই এর পূর্বসূরী হিসেবে বিবেচিত সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন সমাজে তথাকথিত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার নামে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোর জন্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে৷ আর এই ব্যক্তিটি তার পেশাগত স্বভাব অনুযায়ী কখনও অন্যদের বিশ্বাস করে না৷ তাই এই লোকটি তার চারপাশেও নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি করতে অক্ষম৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বা সি. আই.এ'র এই ইতিহাস-ভিত্তিক এই ছায়াছবি অত্যন্ত আকর্ষণীয়৷ এই ছায়াছবির নির্মাতা এমন একটি গোপন সংস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন যা ভয়ানক গোপন সংস্থাগুলোর সমতুল্য এবং এসব সংস্থার রয়েছে নিজস্ব রীতি ও পদ্ধতি৷ আর এই গোপন সংস্থাই পরবর্তীকালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বা সি. আই.এ\'তে রূপ নিয়েছে৷ অবশ্য পাশ্চাত্যের ইতিহাস ও সেখানকার রূপকথাগুলোতেও দেখা যায়, পশ্চিমা সমাজের সামাজিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতারা এ ধরনের ভয়ানক বা কূখ্যাত গোপন সংস্থা থেকেই উঠে এসেছেন৷ প্রাচীন ইতিহাসবিদ হেরোডটাসও এটা উল্লেখ করেছেন৷ পাশ্চাত্যের এ ধরনের নেতারা অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে ও অনেক শ্রম-সাধনার মাধ্যমে নিজ সংস্থার উচ্চ পদে আসীন হন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিও বুশও নিজের যুদ্ধকামী বা আগ্রাসী পদক্ষেপগুলোর অজুহাত হিসেবে মার্কিন সমাজের নিরাপত্তার দোহাই দিয়েছেন৷ বিশেষ করে ইরাকে ও আফগানিস্তানে হামলা চালানোর যুক্তি হিসেবে বুশ এ অজুহাতই ব্যবহার করেছেন৷ বুশ তার বক্তব্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে 'মার্কিনী স্টাইলের' নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বা অন্য কথায় সারা বিশ্বে মার্কিন যুদ্ধকামী নীতি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ আর এ জন্যেই বুশ মার্কিন চলচ্চিত্র সংস্থা হলিউডকেও তার সংস্থার একটি শাখায় পরিণত করেছেন৷)