Monday, April 23, 2012

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরান-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব ও তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর থেকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বিপ্লবের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ ইরানে পরমাণু চুল্লি নির্মাণে সহযোগিতা করেছিল। ১৯৫৬ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ গবেষণা কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সে বছরই একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ১১ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ মেগাওয়াট শক্তি সম্পন্ন একটি ছোটখাট পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ করে। ১৯৭১ সালে ইরানের শাহ সরকার পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ে বেশ ক’টি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ইরানের বুশেহরে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য জার্মানির সঙ্গে চুক্তি, দারখুইনে আরেকটি পরমাণু চুল্লি নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি, পারমাণবিক চুল্লিগুলোর জন্যে জ্বালানি সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি এবং অর্ডিফ কোম্পানির শেয়ার কেনার ঘটনা ছিল এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, ১৯৭৯ সালে ইরানে শাহ সরকারের পতনের পর পশ্চিমা সরকার ও পশ্চিমা কোম্পানিগুলো পরমাণু বিষয়ে ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য গত তেত্রিশ বছরে মার্কিন সরকার ইরানের ওপর ৩৩ বার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে মার্কিন সরকার তাদের কোনো কোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতেও সক্ষম হয়েছে। সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা: পাশ্চাত্যের হুমকি, চাপ ও অবরোধ সত্ত্বেও ইরান তার শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় মার্কিন সরকার এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোর করেছে। শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি বন্ধে ইরানকে বাধ্য করার জন্যই তারা এ পদক্ষেপ নেয়। পাশ্চাত্য ও মার্কিন সরকার দাবি করছে যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। অথচ, ইরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ বলে মনে করে এবং রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকেও পরমাণু অস্ত্রকে ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো উপায় বলে মনে করে না। ইরানের পরমাণু তৎপরতা যে শান্তিপূর্ণ তা স্পষ্ট করার জন্য দেশটির সরকার তার সমস্ত পরমাণু স্থাপনায় নজরদারি করার সুযোগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-কে। তাছাড়া, ইরান পরমাণু অস্ত্র-বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি-তে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ। তেহরান এ পর্যন্ত কখনও ওই চুক্তির কোনো ধারা লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু, তা সত্ত্বেও মার্কিন সরকার জাতিসংঘের পরমাণু তদারকি সংস্থা বা আইএইএ’র মধ্যে নিজের প্রভাব খাটিয়ে এবং কিছু বানোয়াট দলিল-প্রমাণ দেখিয়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে সামরিক বলে দাবি করে। আর এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররা ইরানের পরমাণু প্রসঙ্গটিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠাতে সক্ষম হয়। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন সরকার এ পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রস্তাব পাস করে এবং তেহরানের ওপর চাপিয়ে দেয় বেশ কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা : পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ইরানের পরমাণু তৎপরতাকে বন্ধ তো করতে পারেইনি বরং দেশটি আরও দৃঢ়তার সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে। এ অবস্থায় পশ্চিমা কয়েকটি দেশ জাতিসংঘের মাধ্যমে ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করলেও নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য দেশগুলোর সাড়া পেতে ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘকে দিয়ে নতুন ও আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর মার্কিন সরকার এবং ইউরোপীয় জোট তেহরানের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাশ্চাত্য এটা জানে যে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে ইরানের সবচেয়ে বড় উৎসটি হলো জ্বালানি তেল এবং দেশটির বাণিজ্য লেনদেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফলে, ইরানের জ্বালানি তেল ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য। তারা ভেবেছিল এবারের এই নিষেধাজ্ঞার প্রবল চাপে ইরান কাহিল হয়ে পড়বে এবং পাশ্চাত্যের অন্যায় আব্দার মেনে নিয়ে তেহরান শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করবে। কিন্তু, বাস্তবে ঘটেছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা। নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া : ইরানের জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই বিশ্ব বাজারে তেলের দর বাড়তে থাকে; বিশেষ করে ইউরোপের কয়েকটি দেশে জ্বালানি তেলের দাম নজিরবিহীন মাত্রায় বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ইউরোপের আটটি দেশের ৬৯ শতাংশ মানুষ ইরানের তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরোধিতা করেছে। জার্মানির মার্শাল ফান্ড পরিচালিত জনমত জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া, স্পেন, পোল্যান্ড ও সুইডেনের তিন হাজারের বেশি মানুষের ওপর ওই জরিপ পরিচালিত হয়। ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়- ইরানের ওপর অবরোধ আরোপের ফলে বিশ্বমন্দা দেখা দিতে পারে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে- ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবরোধ আরোপের ফলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে তাতে বিশ্বমন্দার ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে- অবরোধের কারণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা সম্ভব হবে না এবং এতে শুধুমাত্র তেলের দামই বাড়বে। এ প্রতিবেদনের সমর্থনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী টিমথি গেইথনারের একটি মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ৫ এপ্রিল তিনি মার্কিন সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে অব্যাহত উত্তেজনা এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মার্কিন অর্থনীতির জন্য ‘বড় হুমকি’ হয়ে উঠেছে। তার এ মন্তব্যের পাঁচ দিন পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রউসেফ হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বলেছেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হয় উঠতে পারে। তিনি বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে; এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে ওঠার যে চেষ্টা চলছে তা হুমকির মুখে পড়বে। পাশ্চাত্যের পিছু হটা : ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করলেও তা জুলাই মাসে কার্যকর করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ইউরোপের দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতির সংকট আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে এবং ইউরোপীয় জনগণের মধ্যে সরকারবিরোধী ক্ষোভ আরো চাঙ্গা হয়। এ অবস্থায় মার্কিন সরকার ইউরোপের ১০টি দেশের জন্য ইরানের তেল বয়কট করা বাধ্যতামূলক নয় বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু, ইরান পাশ্চাত্যকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আগে-ভাগেই ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে তেল রফতানি বন্ধ করে দেয়। ইউরোপে ইরানের তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তেল সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং অন্য কোনো দেশ ইরানের জ্বালানি তেলের বিকল্প হতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপ নিজের সৃষ্ট সংকটের শাস্তি নিজেই ভোগ করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গত ২০ এপ্রিল ইউরোপীয় জোটের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এই জোট ইরানের জ্বালানি তেল শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামী দু’মাসের মধ্যে তুলে নিতে পারে। ইরানের তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা যে সম্ভব হবে না, এ ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। অবরোধ যখন আশীর্বাদ : পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (রহ.) ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে ঘোষণা দিয়েছিলেন- "ওরা যদি আমাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে আমরা আরো সক্রিয় হব, এটা আমাদের জন্যই লাভজনক। ওরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক, আপনারা এতে মোটেও ভয় পাবেন না।" তিনি আরো বলেছিলেন, "আমরা এখন থেকে বিজাতীয়দের আমাদের দেশে আসার ও মোড়লীপনা করার সুযোগ দেব না। এ দেশে তো আমরা নিজেরাই রয়েছি। তাদের যত ইচ্ছে আমাদের ওপর চাপ দিয়ে যাক এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের জন্য ষড়যন্ত্র করুক। আমরা এসবের পরোয়া করি না।" মরহুম ইমাম প্রখ্যাত মিশরীয় সাংবাদিক হাসনাইন হাইকালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওইসব মন্তব্য করেছিলেন। ইরানের ইসলামী সরকার ইমামের ওই দিক-নির্দেশনা মেনে নিয়ে পাশ্চাত্যের সব ধরনের চাপ মোকাবেলার পথ বেছে নেয় এবং এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরনির্ভরতার পরিবর্তে স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার পথ খুলে যায়। পশ্চিমা সরকারগুলো আশা করেছিল- নিষেধাজ্ঞার কারণে হতাশ হয়ে ইরানের জনগণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ন্যায়কামিতার প্রতি সমর্থন ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ বন্ধ করে দেবে। কিন্তু, পশ্চিমাদের সে আশা বার বারই ভঙ্গ হয়েছে এমনকি নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্যে বুমেরাং হয়েছে। ওবামার গোপন চিঠি : ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পাশ্চাত্যের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দেয়ায় এখন পাশ্চাত্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট খবর দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি মেনে নেবে, তবে ইরানকে এটা প্রমাণ করতে হবে যে,তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় ওবামা এসব কথা বলেছেন। খবরে আরো বলা হয়, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সাক্ষাত হয়। সেখানে তারা ইরানরে পরমাণু কর্মসূচি ও সিরিয়ার চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সিউল থেকে ফিরে এরদোগান তেহরান সফরে যান। তেহরানে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীকে বারাক ওবামার ওই গোপন বার্তা পৌঁছে দেন এরদোগান। বার্তাটি অনেকটা এ রকম-কেবলমাত্র বেসামরিক প্রয়োজনে পরিচালিত হলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মেনে নেবেন। সম্প্রতি, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী বলেছেন, ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে যাবে না। পারমাণবিক অস্ত্রকে ধ্বংসাত্মক ও বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে খামেনেয়ী আরও বলেন, নির্বোধেরাই এ ধরনের অস্ত্রের বিস্তার ঘটায়। ওবামার ওই গোপন চিঠির খবর প্রকাশের সময়ই চীনের বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছিল- তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আবারো আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সমন্বয়ে গঠিত ছয় জাতিগোষ্ঠী। ইরান-ছয় জাতিগোষ্ঠী বৈঠক: দীর্ঘ ১৫ মাস বিরতির পর গত ১৪ এপ্রিল আবারো ইস্তাম্বুলে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইরানের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সাঈদ জালিলি এবং ছয় বৃহৎ শক্তির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশ্টোন। আলোচনা শেষে তাদের দু’জনের মুখেই ছিল প্রশান্তির স্মিত হাসি। আগামী ২৩ মে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে পরবর্তী আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। ইস্তাম্বুল আলোচনা শেষে ক্যাথেরিন অ্যাশ্টোন এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, “পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি বা এনপিটি’র ধারা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি অর্জনের অধিকার ইরানের রয়েছে।” সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ জালিলি বলেছেন, “ছয় জাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় তেহরান পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।” এ বৈঠক সম্পর্কে মার্কিন দৈনিক লস এঞ্জেলস টাইমস লিখেছে, "ইস্তাম্বুল বৈঠকে ছয় জাতিগোষ্ঠী ইরানের কাছে কোনো কিছু দাবি করতে পারেনি এবং কোনো বিশেষ ছাড় বা সুবিধাও আদায় করতে পারেনি। বাগদাদে যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে তা তাতেও কোনো পূর্ব শর্ত থাকছে না।" ইস্তাম্বুল বৈঠকের মতো যদি বাগদাদ বৈঠকও ইতিবাচক ও ইরানের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয় তাহলে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট সব ধরনের অস্পষ্টতা দূর করার পথ প্রশস্ত হবে বলে বিশ্লেষকরা আশা করছেন। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি বিরাট দ্বন্দ্বের অবসান হবে আর বিশ্ব অর্থনীতিও মুক্তি পাবে সম্ভাব্য মন্দার কবল থেকে। ইরান ইস্যুতে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার যে আশঙ্কা বিশ্ববাসীকে চেপে ধরেছিল তারও অবসান হবে বলে আশা করা যায়।#