Monday, May 28, 2012
পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা : মধ্যপ্রাচ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র
দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত পারস্য উপসাগর হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটির লালনক্ষেত্র। মানবজাতির লিখিত ইতিহাসের প্রথম থেকেই বিশ্বের চারটি সনাক্তকৃত সাগরের মধ্যে পারস্য উপসাগর ছিল অন্যতম। কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি পশ্চিমা দেশের ইন্ধনে আরব দেশগুলোর বই-পুস্তক এবং সংবাদ ও প্রতিবেদন থেকে পারস্য উপসাগরের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমেও পারস্য উপসাগরের পরিবর্তে ‘আরব উপসাগর’ নামটি চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সম্প্রতি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, "এ উপসাগরের নাম থেকে 'পারস্য' শব্দটি উঠিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে ইরানি জনগণের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করা। এ ছাড়া, এর ফলে একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা হচ্ছে।" এ নিবন্ধে আমরা পারস্য উপসাগরে নিয়ে ইরান ও কয়েকটি আরব দেশের দ্বন্দ্ব এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পাবো।
পারস্য উপসাগরের অবস্থান
পারস্য উপসাগর দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত। এ উপসাগরটির সুবিস্তৃত উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল ইরানের অংশ। এর পশ্চিমে রয়েছে ইরাক ও কুয়েত, দক্ষিণে রয়েছে সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। পারস্য উপসাগরের মোট আয়তন দুই লাখ ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এ উপসাগর লম্বায় ৯০০ কিলোমিটার এবং চওড়ায় প্রায় ২৪০ কিলোমিটার। ইরান সংলগ্ন পারস্য উপসাগরীয় উপকূলের দৈর্ঘ্য ৮০০ কিলোমিটার। পারস্য উপসাগরের গভীরতা কম এবং সাধারণত: তা ৫০ মিটার, আর সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১০০ মিটার। পারস্য উপসাগর হরমুজ-প্রণালীর মাধ্যমে ওমান সাগর ও মুক্ত মহাসাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে।
ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব
পারস্য উপসাগরের প্রাকৃতিক প্রতিবেশ অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। বর্তমানে বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও পারস্য উপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর কারণ হচ্ছে- পারস্য উপসাগর বিশ্বের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এ উপসাগর কৌশলগত দিক থেকেও বিশ্বের অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় পরাশক্তিগুলো সব সময়ই এ জলপথে তাদের উপস্থিতি জোরদারের প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে।
খার্গ, আবু মুসা, বড় তুন্ব, ছোট তুন্ব, কিশ, কেশম ও লাভান পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ। পারস্য উপসাগরের গুরুত্বের কারণেই এখানকার হরমুজ-প্রণালী বিশ্বের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ প্রণালী হিসেবে বিবেচিত হয়। এ প্রণালী লম্বায় ১৫৮ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ৫৬ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। আন্তর্জাতিক নৌ-পরিবহনের সংখ্যার দিক থেকে হরমুজ প্রণালীর স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এ প্রণালী দিয়ে। বিশ্বের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলবাহী তেল ট্যাংকারগুলোর শতকরা ৪০ ভাগ যাতায়াত করে এ সাগর দিয়ে এবং এ জলপথ দিয়েই রপ্তানি করা হয় বিশ্ববাজারের শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ জ্বালানি তেল। পারস্য উপসাগরের ব্যাপক গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য এটাই জানা যথেষ্ট যে, বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিস্কৃত জ্বালানি তেল ও গ্যাসের শতকরা প্রায় ৬৮ ভাগই রয়েছে এ উপসাগরের নিচে ও আশপাশের দেশগুলোতে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বের বহু দেশের বা অঞ্চলের গুরুত্ব কমে গেলেও পারস্য উপসাগরের গুরুত্ব আগের চেয়েও বেড়েছে। বিশ্ব-অর্থনীতির মূল প্রাণ-প্রবাহ হল এই উপসাগর।
নাম পরিবর্তনের নীলনকশা
পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের সূচনা হয়েছে ব্রিটিশদের মাধ্যমে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের ব্রিটিশ রাজনৈতিক প্রতিনিধি রুড্রিক ওয়েন সর্ব প্রথম তার ‘পারস্য উপসাগরে স্বর্ণালী বুদবুদ' নামক বইয়ে পারস্য উপসাগরকে ‘আরব উপসাগর’ হিসেবে অভিহিত করার প্রস্তাব করেছিলেন। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তিন দশক ধরে ব্রিটিশ কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি স্বদেশে ফিরে ১৯৬৬ সালে পারস্য উপসাগরীয় দক্ষিণ উপকূল সম্পর্কে একটি বই লেখেন।
তিনি এ বইয়ে ভুয়া ও মিথ্যা নাম ‘আরব উপসাগর’ শব্দটি ব্যবহার করেন। বেলগ্রেভ পারস্য উপসাগরীয় দক্ষিণ উপকূলকে ‘চোরদের উপকূল’ বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন যে, আরবরা পারস্য উপসাগরকে ‘আরব উপসাগর’ বলতে আগ্রহী। আর এ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই আরব পত্র-পত্রিকায় পারস্য উপসাগরকে ‘আরব উপসাগর’ লেখা শুরু হয়। এর কয়েক বছর পর মধ্যপ্রাচ্যে অপর ব্রিটিশ প্রতিনিধি চার্লস বেলগ্রেভ তার বইয়ে একই বিষয়ের অবতারণা করেন। আর এভাবেই পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের অপচেষ্টা শুরু হয়। আরও কিছুদিন পর পারস্য উপসাগরের দক্ষিণাঞ্চলের আরব দেশগুলোর সরকারি লেখালেখিতেও ‘আরব উপসাগর’ লেখা হতে থাকে।
২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সবাইকে বিস্মিত করে পারস্য উপসাগরকে ‘আরব উপসাগর’ হিসেবে উল্লেখ করে। এটা সবার কাছেই স্পষ্ট ছিল যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই কাজটি করা হয়েছে। এরপর হাজার হাজার ইরানী ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকার এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদের মুখে পত্রিকাটি ‘আরব উপসাগর’ নামটি বাদ দেয় এবং ‘পারস্য উপসাগর’ নামটিকে ব্যবহার করে। এখানে উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘ গত বছর পুণরায় ‘পারস্য উপসাগর’ নামটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
পারস্য উপসাগরের পক্ষে ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ
মানবজাতির লিখিত ইতিহাসের প্রথম থেকেই বিশ্বের চারটি সনাক্তকৃত সাগরের মধ্যে পারস্য উপসাগর ছিল অন্যতম। গ্রীকরা মনে করত এ চারটি সাগরই উৎসারিত হয়েছে একটি মহাসাগর থেকে যে মহাসাগর বিশ্বের সব জলভাগের সমমাত্রায় বিস্তৃত। তাই এটা স্পষ্ট যে ইরানের প্রাচীন হাখামানেশীয় সম্রাট দারিুয়ুশের শিলালিপিতে "পার্স বা পারস্য সাগর" হিসেবে উল্লেখিত হওয়ার বহু বছর আগেই অ-ইরানি জনগোষ্ঠীও এই বিস্তৃত জলভাগকে পার্স নামেই চিনত।
এ উপসাগরের নাম এত প্রাচীন যে অনেকে মনে করেন, পারস্য উপসাগরই মানব সভ্যতার উৎস বা লালনভূমি। এ অঞ্চলের প্রাচীন বাসিন্দারাই প্রথম জাহাজ তৈরি করেছিল। এসব জাহাজে চড়ে তারা অন্যান্য দেশে যেত। খ্রিস্টের জন্মের ৫০০ বছর আগে সম্রাট প্রথম দারিউশের শাসনামলে ইরানি নাবিকরা তাদের নৌ-অভিযান শুরু করেছিল। জেনোফেন, Ktzyas, স্ট্রাবন ও হেরোডটাসের মত খ্রিস্টপূর্ব যুগের গ্রিক ভূগোলবিদ ও ইতিহাসবিদদের বর্ণনা অনুযায়ী গ্রিকরাই প্রথম এই সাগরকে পার্স সাগর ও ইরানকে পার্স, পার্সি, পার্সিপলিস নাম দিয়েছিল। গ্রিক ভাষায় পার্সিপলিস শব্দটির অর্থ হল পারসিকদের দেশ বা বাসস্থান।
দিগ্বিজয়ী সম্রাট আলেক্সান্ডারের জেনারেল Nyarkhus খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ সালে তার সম্রাটের নির্দেশে সিন্ধু নদ পার হয়ে মুকরান সাগর বা ওমান সাগর ও পারস্য উপসাগর জাহাজ বা নৌকাযোগে পার হয়েছিলেন। তিনি এর মোহনা পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। ভূগোল শাস্ত্রের জনক নামে পরিচিত প্রাচীন গ্রিক ভূগোলবিদ Hecataeus খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৫ সালে পারস্য সাগর শব্দটি ব্যবহার করেছেন। জেনোফেন ও হেরোডটাসের মতে প্রাচীন মানচিত্রগুলোতে এই সাগরকে পারস্য সাগরই বলা হত।
খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় শতকের ভূগোল ও গণিতবিদ টলেমি "বিশ্বের ভূগোল" শীর্ষক ল্যাটিন ভাষার বইয়ে অঙ্কিত মানচিত্রে পারস্য উপসাগরকে "পার্সিকুস সিনুস" বলে উল্লেখ করেছেন। খ্রিস্টিয় প্রথম শতকের রোমান ইতিহাসবিদ Kevin Tus Kurvsyus Rufus এই সাগরকে পারস্য সাগর বা পারস্য জলাধার বলে উল্লেখ করেছেন। ল্যাটিন ভাষায় লিখিত ভূগোলের প্রাচীন বইগুলোতে দক্ষিণ ইরানের জলরাশি তথা মাকরান সাগর ও পারস্য উপসাগরকে "মারেহ পার্সিকুম" বা পারস্য সাগর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইংরেজি, জার্মান, মার্কিন, ফরাসি ও তুর্কি ভাষাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় লিখিত অভিধানগুলোতেও পারস্য উপসাগর শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষায় সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্বকোষ নামে খ্যাত " আলমুঞ্জেদ"ও এই সাগরকে পারস্য উপসাগর বলে উল্লেখ করেছে।
ইবনে বতুতা, আবু রেইহান বিরুনি, হামাদুল্লাহ মাস্তুফি, ইয়াকুত হেমাভি ও নাসের খসরু কাবাদিয়ানিসহ প্রমুখ ঐতিহাসিক ও চিন্তাবিদও তাদের লেখায় এই উপসাগরকে পারস্য উপসাগর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা পারস্য উপসাগর ও ভারত উপমহাদেশে আসার পরও মানচিত্র, চিঠিপত্র ও বইয়ে এই জলপথকে পারস্য উপসাগর অথবা পারস্য সাগর হিসেবে উল্লেখ করেছে। পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স ও বৃটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের রাষ্ট্রীয় চুক্তিনামা ও চিঠিপত্রে সব সময় পারস্য উপসাগর নামটিই উল্লেখ করতো। ১৯৬১ সালে স্বাক্ষরিত কুয়েতের স্বাধীনতা সনদেও স্পষ্টাক্ষরে পারস্য উপসাগর নামটি স্থান পেয়েছে।
বর্তমানে ইরানে পারস্য উপসাগর ও এর নাম নিয়ে ৫০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘ঐতিহাসিক মানচিত্রগুলোতে পারস্য উপসাগর' শীর্ষক বইতে বিশ্বের সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও বিখ্যাত ১৬০টি মানচিত্রকে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে স্পষ্টাক্ষরে এই উপসাগরের নাম পারস্য উপসাগর বা পার্সিয়ান গালফ লেখা রয়েছে।
এতসব দলিল প্রমাণ সত্ত্বেও পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বিদ্বেষপ্রসূত এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি পদক্ষেপ বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
পারস্য উপসাগরের পক্ষে ইরানের প্রচারণা
পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার পর থেকেই ইরানের সরকার ও জনগণ সোচ্চার হয়ে উঠে। ইরানিদের অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে ১৯৯৪ সালের ১৮ আগস্ট জাতিসংঘ সচিবালয় ‘উপসাগর’ লেখার পরিবর্তে ‘পারস্য উপসাগর’ লেখার জন্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মীদের উপদেশ দেন। কিন্তু এরপরও পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ইরান সরকার ফার্সি দশই উর্দি বেহেশত মোতাবেক ৩০শে এপ্রিলকে জাতীয় পারস্য উপসাগর দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পারস্য উপসাগরকে ইরানের জাতীয় নিদর্শন হিসেবে নিবন্ধন করা হয়েছে। পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ইরানি দ্বীপ কিশে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উপসাগরটিকে জাতীয় নিদর্শন হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট ড: মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ঐ অনুষ্ঠানে পারস্য উপসাগরকে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের অঙ্গন হিসেবে অভিহিত করেছেন। পারস্য উপসাগরের ৮ খন্ড বিশিষ্ট সনদ সঙ্কলনের কাজও শুরু করা হয়েছে।
গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি
পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ভিন্ন শব্দ ব্যবহার অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রমিন মেহমানপারাস্ত গত ১৭ মে তেহরানে সাংবাদিকদের বলেছেন, "ইরানের শত্রুরা তেহরানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং এ কাজে গুগলকে খেলার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।" তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, "পারস্য উপসাগরের প্রকৃত নামের পরিবর্তে অন্য কোন নাম ব্যবহার করলে গুগল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
গুগলের অনলাইন মানচিত্রে এতদিন ইরান ও আরব উপদ্বীপের মধ্যবর্তী জলরাশিকে 'পারস্য উপসাগর' হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এ নাম থেকে ‘পারস্য' শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে।
পারস্য উপসাগর না আরব উপসাগর?
পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তন নিয়ে ইরান ও আরব দেশগুলোর মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব চলছে ঠিক তখন ইন্টারনেটে চলছে ভোটাভুটি। http://www.persianorarabiangulf.com নামের ওয়েবসাইটে এ পর্যন্ত ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৩টি ভোট পড়েছে। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে পারস্য উপসাগরের পক্ষে পড়েছে ৬১.১ শতাংশ ভোট আর আরব উপসাগরের পক্ষে পড়েছে ৩৮.৮ ভাগ ভোট। অর্থাৎ এখানেও পারস্য উপসাগর নাম রাখার পক্ষেই বেশ ভোট পড়ে।
‘বিভেদ সৃষ্টিই মূল লক্ষ্য’
পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বলেছেন, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অধিকাংশ দেশ যেসব সমস্যার মোকাবেলা করছে, তার পেছনে রয়েছে বিজাতীয়দের হস্তক্ষেপ,যারা গোটা অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বহু দূর থেকে এখানে এসেছে।
ইরানি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সূত্র ধরে বলতে হয়, পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের অপচেষ্টাও বিজাতীয়দের এ ধরনেরই একটি হস্তক্ষেপ এবং এর উদ্দেশ্য হলো, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি এবং ঐক্যের সুযোগকে সংকীর্ণ করা। #
Monday, April 23, 2012
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরান-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব ও তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর থেকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বিপ্লবের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ ইরানে পরমাণু চুল্লি নির্মাণে সহযোগিতা করেছিল। ১৯৫৬ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ গবেষণা কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সে বছরই একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ১১ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ মেগাওয়াট শক্তি সম্পন্ন একটি ছোটখাট পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ করে। ১৯৭১ সালে ইরানের শাহ সরকার পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ে বেশ ক’টি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ইরানের বুশেহরে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য জার্মানির সঙ্গে চুক্তি, দারখুইনে আরেকটি পরমাণু চুল্লি নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি, পারমাণবিক চুল্লিগুলোর জন্যে জ্বালানি সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি এবং অর্ডিফ কোম্পানির শেয়ার কেনার ঘটনা ছিল এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, ১৯৭৯ সালে ইরানে শাহ সরকারের পতনের পর পশ্চিমা সরকার ও পশ্চিমা কোম্পানিগুলো পরমাণু বিষয়ে ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য গত তেত্রিশ বছরে মার্কিন সরকার ইরানের ওপর ৩৩ বার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে মার্কিন সরকার তাদের কোনো কোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতেও সক্ষম হয়েছে।
সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা: পাশ্চাত্যের হুমকি, চাপ ও অবরোধ সত্ত্বেও ইরান তার শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় মার্কিন সরকার এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোর করেছে। শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি বন্ধে ইরানকে বাধ্য করার জন্যই তারা এ পদক্ষেপ নেয়। পাশ্চাত্য ও মার্কিন সরকার দাবি করছে যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। অথচ, ইরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ বলে মনে করে এবং রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকেও পরমাণু অস্ত্রকে ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো উপায় বলে মনে করে না। ইরানের পরমাণু তৎপরতা যে শান্তিপূর্ণ তা স্পষ্ট করার জন্য দেশটির সরকার তার সমস্ত পরমাণু স্থাপনায় নজরদারি করার সুযোগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-কে। তাছাড়া, ইরান পরমাণু অস্ত্র-বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি-তে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ। তেহরান এ পর্যন্ত কখনও ওই চুক্তির কোনো ধারা লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু, তা সত্ত্বেও মার্কিন সরকার জাতিসংঘের পরমাণু তদারকি সংস্থা বা আইএইএ’র মধ্যে নিজের প্রভাব খাটিয়ে এবং কিছু বানোয়াট দলিল-প্রমাণ দেখিয়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে সামরিক বলে দাবি করে। আর এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররা ইরানের পরমাণু প্রসঙ্গটিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠাতে সক্ষম হয়। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন সরকার এ পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রস্তাব পাস করে এবং তেহরানের ওপর চাপিয়ে দেয় বেশ কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা : পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ইরানের পরমাণু তৎপরতাকে বন্ধ তো করতে পারেইনি বরং দেশটি আরও দৃঢ়তার সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে। এ অবস্থায় পশ্চিমা কয়েকটি দেশ জাতিসংঘের মাধ্যমে ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করলেও নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য দেশগুলোর সাড়া পেতে ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘকে দিয়ে নতুন ও আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর মার্কিন সরকার এবং ইউরোপীয় জোট তেহরানের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাশ্চাত্য এটা জানে যে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে ইরানের সবচেয়ে বড় উৎসটি হলো জ্বালানি তেল এবং দেশটির বাণিজ্য লেনদেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফলে, ইরানের জ্বালানি তেল ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য। তারা ভেবেছিল এবারের এই নিষেধাজ্ঞার প্রবল চাপে ইরান কাহিল হয়ে পড়বে এবং পাশ্চাত্যের অন্যায় আব্দার মেনে নিয়ে তেহরান শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করবে। কিন্তু, বাস্তবে ঘটেছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা।
নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া : ইরানের জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই বিশ্ব বাজারে তেলের দর বাড়তে থাকে; বিশেষ করে ইউরোপের কয়েকটি দেশে জ্বালানি তেলের দাম নজিরবিহীন মাত্রায় বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ইউরোপের আটটি দেশের ৬৯ শতাংশ মানুষ ইরানের তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরোধিতা করেছে। জার্মানির মার্শাল ফান্ড পরিচালিত জনমত জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া, স্পেন, পোল্যান্ড ও সুইডেনের তিন হাজারের বেশি মানুষের ওপর ওই জরিপ পরিচালিত হয়। ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়- ইরানের ওপর অবরোধ আরোপের ফলে বিশ্বমন্দা দেখা দিতে পারে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে- ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবরোধ আরোপের ফলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে তাতে বিশ্বমন্দার ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে- অবরোধের কারণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা সম্ভব হবে না এবং এতে শুধুমাত্র তেলের দামই বাড়বে। এ প্রতিবেদনের সমর্থনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী টিমথি গেইথনারের একটি মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ৫ এপ্রিল তিনি মার্কিন সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে অব্যাহত উত্তেজনা এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মার্কিন অর্থনীতির জন্য ‘বড় হুমকি’ হয়ে উঠেছে। তার এ মন্তব্যের পাঁচ দিন পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রউসেফ হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বলেছেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হয় উঠতে পারে। তিনি বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে; এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে ওঠার যে চেষ্টা চলছে তা হুমকির মুখে পড়বে।
পাশ্চাত্যের পিছু হটা : ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করলেও তা জুলাই মাসে কার্যকর করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ইউরোপের দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতির সংকট আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে এবং ইউরোপীয় জনগণের মধ্যে সরকারবিরোধী ক্ষোভ আরো চাঙ্গা হয়। এ অবস্থায় মার্কিন সরকার ইউরোপের ১০টি দেশের জন্য ইরানের তেল বয়কট করা বাধ্যতামূলক নয় বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু, ইরান পাশ্চাত্যকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আগে-ভাগেই ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে তেল রফতানি বন্ধ করে দেয়। ইউরোপে ইরানের তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তেল সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং অন্য কোনো দেশ ইরানের জ্বালানি তেলের বিকল্প হতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপ নিজের সৃষ্ট সংকটের শাস্তি নিজেই ভোগ করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গত ২০ এপ্রিল ইউরোপীয় জোটের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এই জোট ইরানের জ্বালানি তেল শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামী দু’মাসের মধ্যে তুলে নিতে পারে। ইরানের তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা যে সম্ভব হবে না, এ ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অবরোধ যখন আশীর্বাদ : পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (রহ.) ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে ঘোষণা দিয়েছিলেন- "ওরা যদি আমাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে আমরা আরো সক্রিয় হব, এটা আমাদের জন্যই লাভজনক। ওরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক, আপনারা এতে মোটেও ভয় পাবেন না।" তিনি আরো বলেছিলেন, "আমরা এখন থেকে বিজাতীয়দের আমাদের দেশে আসার ও মোড়লীপনা করার সুযোগ দেব না। এ দেশে তো আমরা নিজেরাই রয়েছি। তাদের যত ইচ্ছে আমাদের ওপর চাপ দিয়ে যাক এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের জন্য ষড়যন্ত্র করুক। আমরা এসবের পরোয়া করি না।" মরহুম ইমাম প্রখ্যাত মিশরীয় সাংবাদিক হাসনাইন হাইকালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওইসব মন্তব্য করেছিলেন। ইরানের ইসলামী সরকার ইমামের ওই দিক-নির্দেশনা মেনে নিয়ে পাশ্চাত্যের সব ধরনের চাপ মোকাবেলার পথ বেছে নেয় এবং এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরনির্ভরতার পরিবর্তে স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার পথ খুলে যায়। পশ্চিমা সরকারগুলো আশা করেছিল- নিষেধাজ্ঞার কারণে হতাশ হয়ে ইরানের জনগণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ন্যায়কামিতার প্রতি সমর্থন ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ বন্ধ করে দেবে। কিন্তু, পশ্চিমাদের সে আশা বার বারই ভঙ্গ হয়েছে এমনকি নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্যে বুমেরাং হয়েছে।
ওবামার গোপন চিঠি : ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পাশ্চাত্যের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দেয়ায় এখন পাশ্চাত্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট খবর দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি মেনে নেবে, তবে ইরানকে এটা প্রমাণ করতে হবে যে,তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় ওবামা এসব কথা বলেছেন। খবরে আরো বলা হয়, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সাক্ষাত হয়। সেখানে তারা ইরানরে পরমাণু কর্মসূচি ও সিরিয়ার চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সিউল থেকে ফিরে এরদোগান তেহরান সফরে যান। তেহরানে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীকে বারাক ওবামার ওই গোপন বার্তা পৌঁছে দেন এরদোগান। বার্তাটি অনেকটা এ রকম-কেবলমাত্র বেসামরিক প্রয়োজনে পরিচালিত হলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মেনে নেবেন। সম্প্রতি, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী বলেছেন, ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে যাবে না। পারমাণবিক অস্ত্রকে ধ্বংসাত্মক ও বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে খামেনেয়ী আরও বলেন, নির্বোধেরাই এ ধরনের অস্ত্রের বিস্তার ঘটায়। ওবামার ওই গোপন চিঠির খবর প্রকাশের সময়ই চীনের বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছিল- তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আবারো আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সমন্বয়ে গঠিত ছয় জাতিগোষ্ঠী।
ইরান-ছয় জাতিগোষ্ঠী বৈঠক: দীর্ঘ ১৫ মাস বিরতির পর গত ১৪ এপ্রিল আবারো ইস্তাম্বুলে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইরানের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সাঈদ জালিলি এবং ছয় বৃহৎ শক্তির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশ্টোন। আলোচনা শেষে তাদের দু’জনের মুখেই ছিল প্রশান্তির স্মিত হাসি। আগামী ২৩ মে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে পরবর্তী আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। ইস্তাম্বুল আলোচনা শেষে ক্যাথেরিন অ্যাশ্টোন এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, “পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি বা এনপিটি’র ধারা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি অর্জনের অধিকার ইরানের রয়েছে।” সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ জালিলি বলেছেন, “ছয় জাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় তেহরান পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।”
এ বৈঠক সম্পর্কে মার্কিন দৈনিক লস এঞ্জেলস টাইমস লিখেছে, "ইস্তাম্বুল বৈঠকে ছয় জাতিগোষ্ঠী ইরানের কাছে কোনো কিছু দাবি করতে পারেনি এবং কোনো বিশেষ ছাড় বা সুবিধাও আদায় করতে পারেনি। বাগদাদে যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে তা তাতেও কোনো পূর্ব শর্ত থাকছে না।"
ইস্তাম্বুল বৈঠকের মতো যদি বাগদাদ বৈঠকও ইতিবাচক ও ইরানের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয় তাহলে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট সব ধরনের অস্পষ্টতা দূর করার পথ প্রশস্ত হবে বলে বিশ্লেষকরা আশা করছেন। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি বিরাট দ্বন্দ্বের অবসান হবে আর বিশ্ব অর্থনীতিও মুক্তি পাবে সম্ভাব্য মন্দার কবল থেকে। ইরান ইস্যুতে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার যে আশঙ্কা বিশ্ববাসীকে চেপে ধরেছিল তারও অবসান হবে বলে আশা করা যায়।#
Sunday, January 22, 2012
ইরানে মার্কিন ড্রোন ও সিআইএ’র গুপ্তচর আটক : হোয়াইট হাউজের উদ্বেগ

লেবেলসমূহ:
ইরান,
ড্রোন,
যুক্তরাষ্ট্র
Subscribe to:
Posts (Atom)