ইহুদীবাদী ইসরাইল মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা মসজিদুল আকসার পশ্চিম দিকের প্রবেশ দ্বারে খননকাজ চালাতে গিয়ে দ্বারটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছে ৷ সারাবিশ্বের মুসলমানরা ইসরাইলের এ ন্যাক্কারজনক কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৷ আল আকসা মসজিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নয়া ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দিগন্তের আজকের আসরে রয়েছে একটি আলোচনা ৷ মসজিদুল আকসা সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত ধর্মীয় স্থান ৷ বিভিন্ন ধর্মের কাছে ঐতিহাসিক এ মসজিদের গুরুত্ব রয়েছে এবং ১৯৬৭ সালে ইহুদীবাদী ইসরাইল এ মসজিদ দখল করার পর থেকে এটিকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে ৷ ইসরাইলী সেনারা কিছুদিন পরপর নতুন নতুন অজুহাতে আল-আকসা মসজিদে হামলা চালিয়ে এর ক্ষতি করছে ৷ ইহুদীবাদীরা গত ৬ই ফেব্রুয়ারি এ মসজিদের উপর সর্বশেষ আগ্রাসন চালায় ৷ এবার তারা মসজিদেরর পশ্চিম দিকের প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে ৷ ইসরাইলীরা এরই মধ্যে ঐ প্রাচীরের নীচে ভূগর্ভস্থ দুটি বৃহত্ হলরুম ধবংস করে ফেলেছে ৷ ইসরাইল সরকার বলছে, জেরুযালেম শহরের ইহুদী অধ্যুষিত এলাকার সাথে মসজিদুল আকসার একটি সংযোগ সেতু নির্মানের লক্ষ্যে তারা ঐ ধবংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ৷ অর্থাৎ ইসরাইল মসজিদুল আকসায় ইহুদীবাদীদের যাতায়াতের সুবিধা করে দেয়ার অজুহাতে মসজিদটির একাংশ ধ্বংসের কাজে হাত দিয়েছে ৷ ইসরাইলীরা আল আকসা মসজিদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু করে ১৯৬৯ সালে এটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ৷ তখন থেকে এ পর্যন্ত তেলআবিব এ মসজিদ ধবংস করার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে ৷ ইহুদীবাদীরা দাবি করছে, মসজিদুল আকসার নীচে হযতর সোলায়মান (আঃ) এর উপাসনালয় অবিস্থত এবং সেটিকে খুঁজে বের করার জন্য তারা এ ধরনের ধবংসাত্মক কাজে হাত দিয়েছে ৷ তারা বিশ্বাস করে, ইহুদী জাতির মুক্তিদাতার আবির্ভাবের সময় এসে গেছে এবং তার আবির্ভাবের ক্ষেত্র সৃষ্টি করার জন্য আল আকসা মসজিদ ধবংস করে সেখানে সোলায়মানের উপাসনালয় নির্মাণ করতে হবে ৷ হযরত সোলায়মান (আঃ) প্রায় তিন হাজার বছর আগে সোলায়মানের উপাসনালয় খ্যাত স্থাপনাটি নির্মান করেছিলেন ৷ কিন্তু তার প্রায় চার শতাব্দি পর বাবোলের অধিবাসীরা এটিকে ধবংস করে ৷ তবে ঐ উপাসনালয় পুনরায় তৈরি করা হলেও হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মের ৭০ বছর পর রোম সম্রাট এটিকে ধবংস করে দেয় ৷ তবে আল আকসা মসজিদের নীচে ঐ উপাসনালয়ের অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা ব্যাপক সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইর বিন দোউফ ব্যাপক গবেষণা ও বহুবার মসজিদুল আকসা পরিদর্শনের পর ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গবেষণার ফলাফল লিখতে গিয়ে বলেন, হযরত ঈসা (আঃ) এর উপাসনালয় কোন অবস্থায়ই আল আকসা মসজিদের নীচে অবস্থিত নয় ৷ ইহুদীবাদীরা তাদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে বৈধতা দেয়ার জন্য হোলোকাস্টের মত যেসব কল্পকাহিনী তৈরি করেছে, সোলায়মানের উপাসনালয় সে রকমেরই একটি কল্পকাহিনী ৷ আরো অনেক ইতিহাসবিদ ও গবেষক মাইর বিন দোউফের এ দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন ৷ এদিকে ইহুদীবাদীরাও এতদিন ধরে খননকাজ চালানোর পরও মসজিদুল আকসার নীচে কোন ধরনের উপাসনালয় খুঁজে পায় নি ৷ কিন্তু তারপরও হযরত সোলায়মান (আঃ) এর উপাসনালয়ের সন্ধানের অজুহাতে ইহুদীবাদীরা মসজিদুল আকসা ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ৷ বলা হচ্ছে, ইসরাইলের ১২৫টি উগ্র ইহুদীবাদী গোষ্ঠি আল আকসা মসজিদকে ধবংস করার দাবি জানাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন কর্মসূচী দিচ্ছে ৷ এ পর্যন্ত ইহুদীবাদী সরকার মসজিদুল আকসার ভিত্তি দুর্বল করার জন্য এর নীচ দিয়ে ট্যানেল তৈরি করেছে এবং এর বেশ কিছু অংশ ধবংস করেছে ৷ ১৯৮২ সালে আল আকসা মসজিদে এ ধরনের এক আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে বহু ফিলিস্তিনী ইসরাইলী সেনাদের গুলিতে শাহাদাতবরণ করেন ৷ ১৯৯০ এর দশকে এ ঐতিহাসিক মসজিদের নীচে বহু খননকাজ চালানো হয় ৷ ১৯৯৬ সালে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ ধরনের একটি ট্যানেল উদ্বোধন করতে গেলে ফিলিস্তিনীদের সাথে ইহুদীবাদীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং এতে বহু ফিলিস্তিনী শহীদ হন ৷ মসজিদুল আকসার পশ্চিম দিকের প্রাচীর ধ্বংসের ইসরাইলী পদক্ষেপের প্রতি মার্কিন সরকার সমর্থন জানালেও বিশ্বব্যাপী এ জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে ৷ কারণ, ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র স্থান হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব ছাড়াও এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা ৷ জাতিসংঘের বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো মসজিদুল আকসা ধ্বংসের কাজ শুরু হওয়ার পর এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি মুসলমান, ইহুদী ও খ্রীস্টানদের পবিত্র স্থান এবং এ কারণে এটি বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ৷ কাজেই ঐ স্থানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জেরুযালেম শহরের পুরনো অংশে কোন খননকাজ চালানো যাবে না ৷ কিন্তু ঐ এলাকার ফিলিস্তিনীদের বিতাড়িত করার জন্য ইহুদীবাদী সরকার তাদের উপর হামলা চালানোসহ তাদের কৃষিজমি ধবংস করে দিচ্ছে এবং সেখানে নতুন নতুন ইহুদী উপশহর নির্মাণ করছে ৷ এভাবে পূর্ব জেরুযালেমকে পুরোপুরি ইহুদীকরণ করে মসজিদুল আকসা ধবংসের কাজে হাত দেয়া তেলআবিবের লক্ষ্য ৷ এ সম্পর্কে লেবাননের আমোল আন্দোলনের নেতা শেইখ আফিফ নাবলুসি বলেছেন, ইহুদীবাদী ইসরাইল বাইতুল মোকাদ্দাস শহরের ঐতিহাসিক নিদর্শন শেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে মসজিদুল আকসা ধবংসের কাজে হাত দিয়েছে ৷ তবে এ কাজে ইহুদীবাদীরা মুসলমানদের তীব্র প্রতিক্রিয়াকে ভয় পাচ্ছে ৷ কারণ, মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা যেখান থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উর্দ্ধাকাশে গমন করেছিলেন, তার কোন ক্ষতি মুসলমানরা হতে দেবে না ৷ ফিলিস্তিনের মুসলমানরা যখনই আল আকসা মসজিদকে বিপদের মুখে দেখেছে, তখনই তারা এ মসজিদ রক্ষার সংগ্রাম করেছে এবং ইহুদীবাদী সেনাদের হামলায় শত শত ফিলিস্তিনী শহীদ হয়েছে ৷ বর্তমানে ফিলিস্তিনীরা যে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা আন্দোলন শুরু করেছে, তার সূত্রপাত হয়েছিল ২০০০ সালে এরিয়েল শ্যারনের প্রবেশের পর ৷ বর্তমানেও ফিলিস্তিনের সংগ্রামী মুসলমানরা মসজিদুল আকসা রক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে এসেছে এবং ইহুদীবাদীদের ধবংসাত্মক কাজে বাঁধা দিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনী শহীদ হয়েছেন ৷ সিএনএন এ সম্পর্কে বলেছে, অতীতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনীদের অধিকাংশ আন্দোলন শুরু হয়েছে মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে ৷ এবারও মসজিদুল আকসার নীচে খনন কাজের সূত্র ধরে ফিলিস্তিনীদের নতুন সংগ্রাম শুরু হতে পারে ৷ নিউজ চ্যানেলটি আরো বলেছে, তারা আশঙ্কা করছে, এবার ফিলিস্তিনীরা তৃতীয় ইন্তিফাদা শুরু করতে পারে ৷ মসজিদুল আকসা ধ্বংসের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধ এবং বিশ্ব মুসলিমের ব্যাপক প্রতিবাদের কারণে এ ব্যাপারে মুসলিম সরকারগুলোর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলিম সরকারগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রতিবাদের সম্ভাবনা না থাকার কারণে ইসরাইল মসজিদুল আকসা ধ্বংসের মত ধৃষ্টতা দেখাতে সাহস পেয়েছে ৷ কারণ, অতীতে দেখা গেছে, ইহুদীবাদী সরকার মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী কোন কাজ করলে মুসলিম সরকারগুলো তেলআবিবের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে ৷ কাজেই এবার মুসলিম সরকারগুলোকে এ ব্যাপারে আরো বেশী সোচ্চার হতে হবে ৷ ইহুদীবাদী সরকার যাতে আল আকসা মসজিদে আর কোন আগ্রাসন চালাতে না পারে সে লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে ৷ আর তা নিতে পারলেই ইসরাইল সরকার সম্মিলিত মুসলিম ঐক্যের কাছে মাথা নত করে এ ধরনের আগ্রাসন থেকে বিরত থাকবে ৷
Monday, June 4, 2007
Friday, June 1, 2007
ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙক্ষিপ্ত চিত্র
১৯৭৯ সালে আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট রেজা শাহ সরকারের পতনের পর থেকেই মার্কিন সরকার ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিপ্লব ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে আমেরিকা ইরান সরকারের উপর ইরাককে দিয়ে যে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল,তাতেও লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। ইরাক ও ইরানের মধ্যে ৮ বছর স্থায়ী ঐ যুদ্ধ থেকে ইরান প্রতিরক্ষার এক অসামান্য অভিজ্ঞতা অর্জন করে। তেহরানের বিপ্লবী সরকারকে গোড়াতেই থামিয়ে দেয়ার মার্কিন পরিকল্পনা আজ ইরানকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। সামরিক ক্ষেত্রে ইরানের গত ২৭ বছরের অর্জন, দেশটির বিরুদ্ধে হুট করে কিছু করে বসার খামখেয়ালিপনা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রেখেছে। ইরান বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চাশটিরও বেশি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করে বলে সমপ্রতি সেদেশের সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে।
পাঠকদের কৌতুহল নিবারনের জন্য এখানে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী কিছু সমরাস্ত্রের পরিচিতি তুলে ধরছি :
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগ্রামী টর্পেডো :
ইরান বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগ্রামী টর্পেডো বা আন্ডার ওয়াটার মিজাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে 'সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)' সাংকেতিক নামের সামরিক মহড়ায় ইরানের নৌবাহিনী ঐ ক্ষেপনাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। ইরানের নির্মিত এই টর্পেডোর গতি সেকেন্ডে একশ মিটার-যা প্রচলিত টর্পেডোগুলোর চার গুণ। বিশ্বে এ যাবৎ নির্মিত টর্পেডোগুলোর সর্বোচ্চ গতি সেকেন্ডে ২৫মিটার। ইরানের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম দেহক্বানি এই টর্পেডো সম্পর্কে বলেছেন, ইরানের বিজ্ঞানীরা অন্য কোন দেশের সহযোগীতা ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন আন্ডার ওয়াটার মিজাইল তৈরী করেছে। তিনি বলেছেন, রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এই টর্পেডোর ছোবল থেকে বিশ্বের অত্যাধুনিক সাবমেরিনও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। ইরান অত্যাধুনিক টর্পেডো তৈরির ঘোষণা দেয়ার পর পশ্চিমা বিশ্ব বিস্মিত হয়েছে। ইরানও যে এ ধরনের ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি করতে পারে, তা পাশ্চাত্যের ধারনার বাইরে ছিল। ইরানের নৌ বাহিনী এই টর্পেডোর নাম দিয়েছে হুত বা তিমি। তিমির মতো ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন বলেই হয়তো এই নামটি নির্বাচন করা হয়েছে। পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরে মোতায়েন মার্কিন নৌ বহরগুলোর হুমকি মোকাবেলা করার লক্ষ্যেই ইরান অত্যাধুনিক আন্ডার ওয়াটার মিজাইল তৈরীর কাজে হাত দিয়েছিল।
ফাজর-৩ ক্ষেপনাস্ত্র :
রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এপ্রিলের সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ফাজর(উষা)-3 ক্ষেপনাস্ত্রেরও সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। বিশ্বের কোন রাডারই ইরানের নির্মিত অত্যাধুনিক ফাইং বোটের উপস্থিতি আঁচ করতে পারবে না এবং এটি চলন্ত অবস্থায় পানির উপরিভাগ থেকে নিমিষেই শুন্যে উঠে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ফাজর(উষা)-৩ ক্ষেপনাস্ত্রের পাল্লা চলি্লশ কিলোমিটার । সাগরে নিজস্ব প্রযুক্তির স্মার্ট মাইন ঃ ইরানের নৌ বাহিনী সাগরে নিজস্ব প্রযুক্তির স্মার্ট মাইন বসানোর মহড়াও সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। বিপদের সময় মুহুর্তের মধ্যেই যাতে কৌশলগত হরমুজ প্রণালীকে শত্রুদের জন্য মৃতু্যপুরিতে পরিণত করা যায়- সে লক্ষ্যেই মাইন বসানোর ঐ মহড়া দেয়া হয়েছে। এই সরু জলপথ দিয়েই বিশ্বের 40 শতাংশ তেল, জাহাজে করে সরবরাহ করা হয়।
ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র : শাহাব-৩
২০০৩ সালে ইরান শাহাব বা উল্কা-3৩সাংকেতিক নামের দুই হাজার একশ কিলোমিটার পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রটির সফল পরীক্ষা চালায়। ইরানের দূর পাল্লার এই ক্ষেপনাস্ত্র অনায়াসেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম। ইরান শাহাব-৩ এর সাহায্যে ইসরাইল ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো গুড়িয়ে দিতে পারবে। এছাড়া, ওমান সাগর ও পারস্য উপসাগরে মোতায়েন মার্কিন সাবমেরিনগুলোও এই ক্ষেপনাস্ত্রের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। দক্ষিণ ইউরোপেরও কয়েকটি দেশে আঘাত হানতে পারবে এই পেনাস্ত্র। ইরান দূর পাল্লার এই ক্ষেপনাসটি ব্যাপক সংখ্যায় তৈরী করছে বলে মনে করা হয়। কারণ শাহাব-৩ এর সফল পরীক্ষার পর ইরানের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলী শামখানি বলেছিলেন, ব্যাপক সংখ্যায় শাহাব-৩ ক্ষেপনাস্ত্র তৈরীর সকল সরঞ্জাম ও ব্যবস্থা ইরানের রয়েছে। ইরান এরই মধ্যে দশ হাজার পাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র তৈরীর কাজে হাত দিয়েছে বলে সমর বিশারদদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র তৈরীতে সফল হলে আমেরিকাও ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রের নাগালের ভেতরে চলে আসবে।
অত্যাধুনিক জঙ্গী বিমান 'বজ্র':
ইরান সমপ্রতি অত্যাধুনিক জঙ্গী বিমান তৈরি করেছে। ৬ই সেপ্টেম্বর'০৬ ইরানের বিমান বাহিনী তাদের নির্মিত প্রথম বোমারু জেট জঙ্গী বিমান প্রদর্শন করে এবং জঙ্গী বিমান নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের কথা ঘোষণা করে। ওমান সাগর ও পারস্য উপসাগরে 'জুলফিকারের আঘাত' সাংকেতিক নামের সামরিক মহড়া চলাকালে, ইরানের নির্মিত জঙ্গী বিমানের সফল উড্ডয়ন ঘটানো হয়। ইরানের নির্মিত জঙ্গী বিমানের নাম দেয়া হয়েছে- স্বায়েকে বা বজ্র। ইরানের বিমান বাহিনী বলেছে, 'বজ্র' নামের জঙ্গী বিমানটি পুরোপুরিভাবে ইরানে নির্মিত এবং একজন পাইলট চালিত এই জঙ্গী বিমান আমেরিকার এফ-এইটটিন জঙ্গী বিমানের চেয়েও শক্তিশালী। উন্নতমানের রাডার সজ্জিত ইরানের এ জঙ্গী বিমান কয়েক ধরনের ক্ষেপনাস্ত্র, রকেট ও বোমা বহন এবং নিক্ষেপ করতে সক্ষম।
সাবমেরিন তৈরী :
ইরানের বিজ্ঞানীরা প্রথম বারের মতো সাবমেরিন তৈরী করেছে। ইরানের তৈরী তিমি শ্রেনীর সাবমেরিন পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরের তুলনামূলক কম গভীর ও লোনা পানিতে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে । সাবমেরিনটি তৈরীতে বিদেশী কোন বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেয়া হয় নি বলে বার্তা সংস্থা ফার্সের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। সাবমেরিনটি ইরানি বিজ্ঞানীদের 10 বছরের নিরলস গবেষণার ফসল বলে ইরানের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন
দুই হাজার পাউন্ড-গাইডেড বোমা তৈরি :
জঙ্গী বিমান নির্মাণে সফলতার কথা ঘোষণার দিনই ইরানের সশস্ত্র বাহিনী দুই হাজার পাউন্ড-গাইডেড বোমা তৈরিরও ঘোষণা দেয়। বিশ্বের হাতে- গোনা কয়েকটি দেশের কাছে এ ধরনের স্মার্ট ও গাইডেড বোমা রয়েছে। এছাড়া 'জুলফিকারের আঘাত' মহড়ায় ইরানের সেনা,নৌ ও বিমান বাহিনী আলাদা আলাদা ভাবে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী কয়েকশ কিলোমিটার পাল্লার বিভিন্ন মডেলের ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা :
ইরানের নিয়মিত সৈন্য সংখ্যা পাঁচ লক্ষেরও বেশী। আধা সামরিক বাহিনীতেও কয়েক ল প্রশিক্ষিত সদস্য রয়েছে। এছাড়া ইরানের 15 বছরের বেশী বয়সী সকল পুরুষের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়া বাধ্যতামূলক।
সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের কথা :
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী-ই হচ্ছেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি সমপ্রতি সেদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও বেশী শক্তি অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীকে এত বেশী শক্তি অর্জন করতে হবে যাতে বলদর্পী দেশগুলো ইরানের সম্পদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকানোরও সাহস না পায়।
আঘাত এলে পালটা আঘাত :
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পূর্বে ইরানের সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণভাবে আমেরিকার উপর নির্ভরশীল ছিল। ইরানের সেই পরনির্ভরশীল অবস্থা থেকে উত্তরণের পেছনে একটি বড় কারণ হলো-মার্কিন বৈরিতা। আমেরিকার শত্রুতা ও ষড়যন্ত্র আজ ইরানের জন্য শাপে বর হয়েছে। ইরান,আমেরিকার হুমকি মোকাবেলায় নিজেকে শক্তিশালী করতে বাধ্য হয়েছে। ইরান কখনো অন্য রাষ্ট্রের উপর হামলার নীতিতে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু নিজ দেশ আত্রান্ত হলে ইরানের সশস্ত্রবাহিনী ও জনগণ যে কাউকেই ছেড়ে দেবে না একথা দিবালোকের মতো স্বচ্ছ।
পারমানবিক বোমা দেশে দেশে
পরমাণূ প্রযুক্তির অধিকারী দেশগুলোর মধ্যে কোনো কোনো দেশ শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে পরমাণূ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কিন্তু পরমাণূ শক্তিধর অন্য দেশগুলো শিল্প বা অন্যান্য শান্তিপূর্ণ ক্ষেত্রে পরমাণূ শক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক বা গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছে। পরমাণূ অস্ত্রের অধিকারী দেশগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগে রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, বৃটেন ও চীন। এই দেশগুলো পারমাণবিক কাবের পুরনো সদস্য। একইসাথে এ দেশগুলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেরও স্থায়ী সদস্য। এই দেশগুলো পরমাণূ অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তি বা এনপিটি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বৃহৎ পঞ্চশক্তি বলে পরিচিত এই দেশগুলো তাদের পরমাণূ অস্ত্র ধ্বংসের ব্যাপারে এই চুক্তির কোনো শর্তই পালন করেনি। পরমাণূ অস্ত্রের অধিকারী দ্বিতীয় শ্রেণীর দেশগুলো পরমাণূ অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তি বা এনপিটিতে স্বার করেনি। ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইহুদিবাদী ইসরাইল এই শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকাই সর্বপ্রথম এই ধ্বংসাত্মক অস্ত্র নির্মাণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে এ অস্ত্রের অধিকারী হলে বিশ্বের সামরিক ভারসাম্য বদলে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আমেরিকা জাপানের হিরোসীমা ও নাগাসাকি শহরের জনগণের ওপর পরমাণূ বোমা নিপে করায় জাপান সরকার আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
রাশিয়া : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার সাথে শক্তির ভারসাম্য রার জন্যে পরমাণূ অস্ত্র অর্জনের জোর প্রচেষ্টা চালায় । মস্কো ১৯৪৯ সালে তার পরমাণূ অস্ত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
ফ্রান্স, বৃটেন ও চীন : রাশিয়ার পর ফ্রান্স, বৃটেন ও চীন ষাটের দশকে পরমাণূ বোমার অধিকারী হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটে। আমেরিকা ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে মূলতঃ গোটা বিশ্ব দুটি ব্লক বা বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আর এক্ষেত্রে এ উভয় পরাশক্তির জন্যেই পরমাণূ শক্তি পরস্পরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে পরিণত হয়। পরমাণূ শক্তির কারণে এ উভয় দেশ পাঁচ দশকেরও বেশী সময় ধরে পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থেকেছে। কারণ পরমাণূ শক্তিধর এ দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে তাতে কেউই বিজয়ী হতো না।
কার কাছে কতটি বোমা ?
আমেরিকা : সর্বসামপ্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে সাতাশ হাজার ছয়শোটি পরমাণূ অস্ত্র রয়েছে। এরমধ্যে আমেরিকার কাছে রয়েছে অন্ততঃ দশ হাজার পরমাণূ অস্ত্র।
রাশিয়া : বিশ্বে আমেরিকার পরে রাশিয়ার কাছেই সবচেয়ে বেশী পরমাণূ অস্ত্র রয়েছে। অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর রাশিয়ার পরমাণূ অস্ত্রের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা দূর্বল হয়ে পড়ায় দেশটির সামরিক বাজেট ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে এবং এমনকি দেশটি তার অনেক পরমাণূ স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের খরচও যোগাতে পারছে না।
ফ্রান্সঃ ফ্রান্স ১৯৬০ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ২১০ টি পরমাণূ অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ১৯৯২সালে এ দেশটির পরমাণূ অস্ত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১১০টিতে। ফ্রান্সের ৮৪ টি বিমান ও চারটি ডুবোজাহাজের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ পরমাণূ অস্ত্র মোতায়েন রয়েছে।
বৃটেনঃ ফ্রান্সের পর বৃটেন ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরমাণূ শক্তি। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে দেশটি প্রায় ৮৩৪ টি পরমাণূ অস্ত্র নির্মাণ করেছে। বৃটেনেরও চারটি পরমাণবিক ডুবো জাহাজ রয়েছে। এই ডুবোজাহাজগুলোর প্রত্যেকটিই ১৬টি ট্রাইডেন্ট ক্ষেপনাস্ত্রে সজ্জিত।
চীনঃ চীন পারমাণবিক কাবের পঞ্চম সদস্য। এই দেশটির কাছে ৪০০টি পরমাণূ অস্ত্র রয়েছে এবং পরমাণূ অস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্যে বিভিন্ন ধরনের উৎক্ষেপণ মঞ্চও রয়েছে। চীন তার অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি সামরিক শক্তিও বৃদ্ধি করে চলেছে।
ভারতঃ ভারত সর্বপ্রথম ১৯৭৪ সালে পরমাণূ অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এরপর দেশটি ১৯৮৮ সালে আরো ৫টি পরমাণূ অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ভারতের পরমাণূ অস্ত্রের প্রকৃত সংখ্যা কয়টি তা নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে মনে করা হয় ভারতের কাছে ৭৫ থেকে ১১০টি পরমাণূ অস্ত্র রয়েছে।
পাকিস্তান: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ৮০'র দশকে পরমাণূ তৎপরতা শুরু করে। দেশটির কাছে ৫০-৬০টি বোমা রয়েছে।
উত্তর কোরিয়াঃ পূর্ব এশিয়ার অন্য একটি দেশ উত্তর কোরিয়ার কাছে নয়টি পরমাণূ অস্ত্র আছে বলে মনে করা হয়।
ইসরাইল: বর্ণবাদী ইসরাইল ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো পরমাণূ অস্ত্র নির্মাণ করে। দখলদার ইসরাইলের পরমাণূ অস্ত্রের সঠিক সংখ্যা কতো তা জানা বেশ কঠিন। তবে ইহুদিবাদী ইসরাইলের কাছে প্রায় ২০০ পরমাণূ বোমা বা অস্ত্র আছে বলে মনে করা হয়।
পরমাণু বোমা ও আমেরিকা :
আমেরিকা চায় পরমাণূ অস্ত্র শুধু পারমাণবিক কাবভূক্ত দেশের মধ্যেই সীমিত থাকুক। অর্থাৎ পরমাণূ অস্ত্রের অধিকারী ৫ টি দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছে পরমাণূ অস্ত্র থাকুক তা আমেরিকার কাম্য নয়। অবশ্য আমেরিকার এ নীতির ক্ষেত্রে ইসরাইলকে ব্যতিক্রম ধরা হয়েছে। আমেরিকা সেই ষাটের দশকের প্রথম থেকেই দখলদার ইসরাইলকে পরমাণূ ক্ষেত্রে সহযোগীতা করে আসছে।
পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহঃ
১৯৪৫ সালে মার্কিন পরমাণূ বোমার আঘাতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর দুটি ধ্বংস হয়ে গেলে বিশ্ববাসী পরমাণূ বোমার প্রলয়ংকরি ধ্বংসাত্মক মতা সম্পর্কে অবহিত হয়। কিন্তু পরমাণূ অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত চুক্তি বা এনপিটি প্রণয়ন করতে বিশ্ব সমাজ আরো দুই দশক সময় নেয়। বিশ্ব সমাজ ১৯৬৯ সালে এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি স্বারিত হবার পর আমেরিকা ও রাশিয়া তাদের পরমাণূ অস্ত্রগুলোর সংখ্যা কমানোর জন্যে আরো কয়েকটি চুক্তি স্বার করে। এ চুক্তিগুলো সল্ট-এক, সল্ট-দুই, স্টার্ট-এক ও স্টার্ট দুই নামে পরিচিত। কিন্তু পরমাণূ অস্ত্রের অধিকারী কোনো দেশই এনপিটিতে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী পরমাণূ অস্ত্র কমিয়ে ফেলতে রাজী হয়নি। সল্ট-এক, সল্ট-দুই, স্টার্ট-এক ও স্টার্ট দুই প্রভৃতি চুক্তিগুলোও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ঘটনায় প্রভাবিত হয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরমাণূ অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ নিরসনের লক্ষ্যে পরমাণূ অস্ত্র পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার চুক্তি তথা কমপ্রিহেন্সিভ টেষ্ট ব্যান ট্রিটি বা সংক্ষেপে সি টি বি টি চুক্তি স্বারিত হয়। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বেশী পরমাণূ অস্ত্রের অধিকারী দেশ আমেরিকা এখনও এ চুক্তি অনুমোদন করতে রাজী হয়নি। আর এ থেকে বোঝা যায়, আমেরিকা বিশ্বে পরমাণূ অস্ত্রের বিস্তার রোধ করতে আগ্রহী বলে যে প্রচার চালিয়ে থাকে তা সত্য বা আন্তরিক নয়। আসলে মার্কিন সরকার শুধু বিশ্বব্যাপী নিজের আধিপত্য ও কতৃর্ত্ব বিস্তারের স্বপ্নে বিভোর।
এই পৃথিবীতে সবার প্রিয় মধুর নাম যে 'মা'
পৃথিবীতে বাবা-মাই আমাদেরকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন। জন্মের পর থেকেই প্রতিটি বাবা-মা নিজেদের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে সন্তানের সুখ ও নিরাপত্তার জন্য যতটা পেরেশান হয়ে পড়েন অন্য কেউই এমনটি করেন না। সন্তান যেন আদর্শ মানুষ হয় এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয় সেজন্য বাবা-মা শৈশব থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আর এজন্যই পৃথিবীর সব ধর্মই বাবা-মাকে বিশেষ সম্মান দিয়েছে।
পবিত্র কুরআনে বাবা-মা :
পবিত্র কোরআনের অন্ততঃ পনের জায়গায় পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। সুরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি কেননা তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরো নির্দেশ দিয়েছি আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।' অন্যদিকে সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে 'উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা। তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণভাবে কথা বলো।
'রাসূলের দৃষ্টিতে বাবা-মা :
রাসূলে খোদা মায়ের মর্যাদা দিতে গিয়ে বলেছেন, জান্নাত মায়ের পদতলে। অন্যদিকে পিতার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নির্ভর করে। পিতামাতার সাথে অসৎ আচরনের পরিণাম সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ কী তা কি আমি তোমাদের জানাব? তা হচ্ছে- আলাহর সঙ্গে শিরক করা ও পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণ। এ প্রসঙ্গে হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, পিতামাতাকে অসম্মান করা বড় ধরণের পাপ।
'কার মর্যাদা বেশী ?
পিতামাতা দুজনই সন্তানের কাছে মর্যাদাবান হলেও ইসলামে মায়ের মর্যাদা পিতার চেয়েও বেশী দেওয়া হয়েছে। কারণ সন্তানকে লালনপালন করার ক্ষেত্রে মা-ই বেশী ভূমিকা পালন করে থাকেন। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জন্মের আগেই বাবা এবং মাত্র ছয় বছর বয়সেই মাকে হারান। বাবার স্নেহ ও মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হলেও নবীজি তাঁর দুধমা হালিমাকে মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ঘটনা নিম্নরুপঃ 'রাসূল (সাঃ) একদিন তাঁর সাহাবীদের সাথে আলাপ করছিলেন। এমন সময় এক বৃদ্ধা সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। নবীজি বৃদ্ধাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং তাঁর গায়ের চাদরটি মাটিয়ে বিছিয়ে তাকে বসতে দিলেন। তারপর অত্যন্ত দরদ দিয়ে বৃদ্ধার সাথে কথাবার্তা বললেন। বৃদ্ধা চলে গেলে সাহাবীরা বিষ্মিত হয়ে নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন,' কে এই মহিলা যার জন্য আপনার এতো দরদ, এতো আন্তরিকতা?' নবীজি উত্তরে বললেন, তিনি আমার দুধমাতা হালিমা। তিনি আরো জানালেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরেই মায়ের স্থান এবং মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেশত।
বায়েজীদ বোস্তামীর মাতৃভক্তি :
কেবল রাসূল (সাঃ)-ই নন, যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ মাতৃভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ইরানের বিখ্যাত সাধক হযরত বায়েজীদ বোস্তামীর নাম কে না জানে?। ইরানের মাজানদারান প্রদেশের বোস্তাম নগরে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। কবি কালিদাস রায় তার 'মাতৃভক্তি' কবিতায় বায়েজিদ বোস্তামীর মাতৃভক্তির এক বিষ্ময়কর কাহিনী তুলে ধরেছেন। এই কবিতায় আমরা দেখতে পাই- একদিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর মা হঠাৎ করে রাতে ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ দেখলেন, ঘরের কলসিতে পানি নেই। তখনি তিনি ছুটলেন বহু দুরের ঝর্ণা হতে পানি আনতে। পানি নিয়ে এসে দেখলেন, মা এরই মধ্যে ঘুমিয়ে গেছেন। মায়ের ঘুম ভাঙানো অপরাধ হবে ভেবে তিনি সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলেন। আর প্রতিজ্ঞা করতে লাগলেন- কখন মায়ের ঘুম ভাঙবে? এক সময় রাত কেটে গেল। ফজরের আযান হলো। মা জেগে দেখলেন, বায়েজিদ দাঁড়িয়ে আছেন। মায়ের প্রতি ভক্তি দেখে আনন্দে মা কেঁদে ফেললেন। কবি কালিদাসের ভাষায়-কহিল মা, মরি মরি!বাছারে আমার পানি হাতে করে সারা রাত্রটি ধরিদাঁড়াইয়া আছো? ঘুমাওনি আজ? চোখে এলো জল ভরি।এ ঘটনার পর কান্না ভেজা চোখে মা সেদিন বায়েজিদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আর মায়ের দোয়ার বরকতে হযরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।
মা মাকড়সার আত্মত্যাগ :
মা মাকড়সার ডিম ফুটে যখন বাচ্চা বের হয় তখন তারা ক্ষুধার জ্বালায় মা-মাকড়সার শরীর ঠুকরে ঠুকরে খেতে থাকে। এভাবে খেতে খেতে এক সময় মায়ের পুরো শরীরটাই তারা খেয়ে ফেলে। সকল যন্ত্রণা মা নীরবে সহ্য করে। এভাবে নিজের জীবন দিয়ে তারা সন্তানের জীবন বাঁচায়।
বাংলা সাহিত্যে 'মা' :
বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে মায়ের উপস্থিতি। এমন কোন কবি হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি মাকে নিয়ে কবিতা লিখেন নি। বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লিখেছেন-যেখানেতে দেখি যাহা মা-এর মতন আহাএকটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,মায়ের যতন এত, আদর সোহাগ সে তোআর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই। অন্যদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-মা বুঝি গান গাইতো আমারদোলনা ঠেলে ঠেলেমা গিয়েছে, যেতে যেতেগানটি গেছে ফেলে।
মা যদি হারিয়ে যায় !
পৃথিবীতে যে মানুষটি আমাদের এতো আপন সেই মা-ই যদি কোন সময় হারিয়ে যায়; তাহলে কেমন লাগবে একবারও কি ভেবে দেখেছেন কখনো? যাদের মা নেই তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই আমাদের সবার উচিত মা-বাবাকে সম্মান করা এবং যাদের মা নেই তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
এই পৃথিবীতে সবার প্রিয় মধুর নাম যে 'মা'
কি যেন জাদু 'মা' নামেতে ভুলতে পারি না।
বন্ধুত্ব কি এবং কেন?
বন্ধুহীন জীবন নাবিক বিহীন জাহাজের মতো। তাই মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন অনুভব করে। কারণ, একজন প্রকৃত বন্ধু জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হয়। প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্দার আত্মীয় হয়ে কিছুণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে। প্রাচীন প্রবাদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হতো, 'সম্পর্ক যখন জ্বরে পুড়ে তখন তার নাম হয় ভালবাসা, আর ভালবাসা যখন জ্বরে পুড়ে তার নাম হয় বন্ধুত্ব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল বলেছেন, 'দুটি দেহে একটি আত্মার অবস্থানই হলো বন্ধুত্ব।' এমারসন বলেছেন, 'প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব।' নিটসে বলেছেন, 'বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছে প্রাণরাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেলো, সে একটি গুপ্তধন পেলো।'
এবার দেখা যাক বন্ধুত্ব সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবেন না। হাদিসে বলা করা হয়েছে, 'মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।' এর মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সব ধরনের লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে ।' এজন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, 'সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না, বরং ৩টি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। গুণ তিনটি হল- ১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচণ ২. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং ৩. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান।'
ফরাসী এক প্রবাদে বলা হয়েছে, 'বন্ধুত্ব হলো তরমুজের মতো। ভালো একশটিকে পেতে হলে এক কোটি আগে পরীা করে দেখতে হয়।' ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ' । এ উক্তির মুলকথা হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে । তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। জ্ঞানী, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ত্যাগী, নিঃস্বার্থ, চরিত্রবান, সহজ-সরল ইত্যাদি গুণাবলি দেখে বন্ধু নির্বাচন করলে আশা করা যায় সে উত্তম বন্ধু হতে পারে।
ইমাম জয়নুল আবেদীন (রহঃ) পাঁচ শ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই পাঁচ শ্রেণীর মানুষ হলো- মিথ্যাবাদী, ইতর, কৃপন, অভদ্র ও নির্দয়। অন্যদিকে ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) তিন শ্রেণীর লোকের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই তিন শ্রেণী হলো- বিশ্বাসঘাতক, নির্মম ও মিথ্যাবাদী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন সকল বন্ধুই শত্রুতে পরিণত হবে তবে একমাত্র সৎ বন্ধুই সেদিন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেবে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা, আমানতদারি, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্থতা প্রভৃতি গুণের প্রতি ল্য রাখতে হবে।
তবে ভালো গুণ দেখে বন্ধুত্ব করার পরও অনেক সময় বন্ধুর মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা খারাপ গুণগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়। এক্ষেত্র যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন, আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)। 'ইমাম জাফর সাদেকের এক বন্ধু ছিলো; যে সব সময় ইমামের সাথে ঘোরাফেরা করতো। একদিন ইমাম বাজারে গেলেন। সঙ্গে সেই বন্ধু ও তার কাজের ছেলেটি ছিলো। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কাজের ছেলেটি কৌতুহল বশতঃ এটা ওটা দেখছিলো এবং মাঝে মাঝে পরিচিত লোকদের সাথে কথা বলছিলো। এতে সে তার মনিবের কাছ থেকে একটু পিছিয়ে পড়লো। আর এদিকে ইমাম ও তার বন্ধুটি বাজারের মাঝখানে চলে গেল। হঠাৎ পেছনের দিকে তাকিয়ে কাজের ছেলেকে না দেখে ইমামের বন্ধুর মেজাজ বিগড়ে গেল। কিছুন পর ছেলেটি ফিরে এলে মনিব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ইমামের সামনেই সে কাজের ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলো। লোকটির অশ্লীল কথাবার্তা শুনে ইমাম অবাক হয়ে তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললেন, 'হায় আল্লাহ! একি করলে তুমি! ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলে? আমি তো মনে করেছিলাম তুমি একজন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক। এখন দেখছি সামান্য তাকওয়াও তোমার মধ্যে নেই!'ইমামের কথা শুনে লোকটি বলল, আপনাকে আর কি বলবো, এই ছেলেটি আসলেই বদ। তার মা সিন্ধু থেকে এসেছিলো। ওই বেটির জন্মেরও কোন ঠিক ছিল না। তাছাড়া সে মুসলমানও ছিল না। সেক্ষেত্রে তাকে কিছু বলা মোটেও অন্যায় হয়নি।'ইমাম বললেন, 'আমি জানি ওই মহিলা একজন অমুসলিম ছিল। কিন্তু তোমার জানা দরকার, প্রত্যেক ধর্মেরই নিজ নিজ আইন কানুন আছে। একজন অমুসলিম তার নিজ ধর্মের আইন অনুযায়ী বিয়ে করলে অশুদ্ধ হয় না। তাদের বিয়ের পর সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করলেও তা অবৈধ হয় না। তুমি ছেলেটির মাকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দিয়েছো। তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আজ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের অবসান হলো। এ ঘটনার পর ইমাম জাফর সাদেকের সাথে ওই লোকটিকে আর কখনই দেখা যায়নি।'
অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু এ কথা সবাই জানে। যে লোক রোদ উঠলে ছাতা ধার দেয় আর বৃষ্টি শূরু হলেই ছাতা নিয়ে নেয় সে কখনো বন্ধু প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। এ সম্পর্কে একটি বহুল প্রচলিত গল্প আছে। 'একবার দুই বন্ধু জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একটি ভাল্লুক তাদেরকে আক্রমন করতে এলো। দু'বন্ধুর মধ্যে যে গাছে উঠতে জানতো সে অন্যজনকে সাহায্য করার চেষ্টা না করে দৌড়ে গিয়ে গাছে উঠলো। অন্যজন কোন উপায় না দেখে মাটির ওপর মরার মতো শুয়ে রইলো। ভাল্লুক এসে লোকটির মুখ শুঁকে মৃত ভেবে চলে গেল। ভাল্লুক চলে যেতেই গাছের ওপর থেকে লোকটি নিচে নেমে এসে তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো, 'বন্ধু! ভাল্লুক তোমার কানে কানে কি বলল?' লোকটি জবাব দিলো- ভাল্লুকটি আমাকে বলেছে , যে বন্ধু বিপদ দেখে পালিয়ে যায়, সে প্রকৃত বন্ধু নয়; তাকে কখনো বিশ্বাস করো না।'এ গল্প থেকে বুঝা যায় যে, সত্যিকারের বন্ধু কখনো বন্ধুর বিপদ দেখে পালিয়ে যেতে পারে না। বরং তারা বিপদে- আপদে পরস্পরকে সাহায্য করে। সে সাহায্য কোন দয়া-দাণ্যি কিংবা অনুগ্রহ নয়। সে সাহায্য জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যদি এ রকম সাহায্য না পাওয়া যায় তাহলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকে না।
বন্ধুত্ব যেমন সামাজিক জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তেমনি বন্ধুত্ব করা ঈমানের অঙ্গও বটে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসল, তাঁর জন্যই কাউকে ঘৃণা করল, তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে দান করল এবং তা থেকে বিরত থাকল তবে নিঃসন্দেহে সে নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।' তাই বন্ধুত্ব যদি করতে হয় তাহলে ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। তাহলেই আমাদের জীবন হবে বিপদমুক্ত, নির্মল, ও আনন্দময়। #
Subscribe to:
Posts (Atom)